১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

জাবিতে শিবির সন্দেহে আটক করে আন্দোলন বানচালের কৌশল

-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সন্দেহে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে মামলা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার রাতে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাদ শরীফ ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নুরুল আমিনকে ক্যাম্পাস থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয় এবং গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাবি ভিসির বিরুদ্ধে ফেসবুক মেসেঞ্জারের ‘অপপ্রচার’এর অভিযোগে আটককৃতদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে।
আটকের বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘সন্ধ্যায় মশাল মিছিলে শিবির ও ছাত্রদল অংশ নেবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সারা দিন ক্যাম্পাস পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। মিছিল চৌরঙ্গী এলে তাদের দু’জনকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে মোটরসাইকেলসহ আটক করি। আটকের পর তাদের মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে শিবিরসংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। পরে এসব প্রমাণসহ রাতে তাদেরকে আশুলিয়া থানায় প্রেরণ করা হয়। তবে আটককৃতরা বলছেন তারা শিবির বা অন্য কোনো সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত নন। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে ‘এমনিতেই’ক্যাম্পাসে এসেছেন।
মামলার বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক তসলিম উদ্দিন জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী সাদ শরীফকে আসামি করে বুধবার দুপুরে জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে।
পরিদর্শক তসলিম আরো বলেন, ‘সাদ শরীফের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচারও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে তারা শিবির করে না বলে জানা গেছে; কিন্তু সাদ শরীফ অন্য কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা শিবির সম্পৃক্তরার কোনো প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।
এ দিকে ঘটনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের আন্দোলনকে শিবিরের আন্দোলন বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় জাবির নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগরকে অস্থিতিশীল করে তোলা নয়, পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গতকালকের মশাল মিছিলে যোগ দিতে এসে শিবির নেতা ধরা পড়ায় ভিসি-বিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা দিনের বেলার কর্মসূচি পালন করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হলেও রাতের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা এই কাজে শিবির ও বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে জমায়েত করেন যা শিবির নেতা আটকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
এ দিকে ‘শিবির ট্যাগ’ দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে বানচাল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে মনে করে পাল্টা প্রতিবাদ সংবাদ সম্মেলন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই কলা অনুষদে এ সংবাদ সম্মেলনে করে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।
সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলে, ‘শিবির ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন বানচাল করতে চাচ্ছে। সাধারণ ছাত্ররা যেন আন্দোলনে আসতে ভয় পায় সেজন্য এসব করা হচ্ছে। ওই দুইজনকে আটক করা হয়েছে ক্যাম্পাসের অন্য জায়গা থেকে কিন্তু প্রশাসন বলছে মশাল মিছিল থেকে। মূলত প্রশাসন নিজেদের বাঁচাতে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা না বলতে ‘জজ মিয়া’নাটক সাজিয়েছে। একজন সন্দেহভাজন লোককে আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল, মেসেঞ্জার চেক করেছে। এটা রাষ্ট্র নিরাপত্তার সাথে করতে পারে, নিরাপত্তা বাহিনী করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পারে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ না। সন্দেহভাজনদের ব্যক্তিগত ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ চেক করে প্রশাসন ফৌজদারি অপরাধ করেছে বলে মাহাথির মোহাম্মদ মন্তব্য করেন।


আরো সংবাদ



premium cement