২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাংকগুলোর সাড়া নেই

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ ছাড়
-

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে নীতিমালা শিথিল করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছিল, টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে (রেপো) অর্থের সংস্থান করতে পারবে। ওই অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু নীতিমালা শিথিলের এক মাস পার হলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর কোনো সারা মিলছে না। গত এক মাসে মাত্র একটি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। তাই পড়ন্ত পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অন্যতম উদ্যোগ ছিল ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থের সংস্থান করা। এর আগে ঋণ আমানতের অনুপাত সাড়ে ৮৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ শতাংশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসভবে ৯২ হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। এ থেকে ব্যাংকগুলো প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। এমন বিধান আগেই দেয়া রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রায় ২৩টি ব্যাংকের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমা ২৫ শতাংশে আনতে গেলে আলোচ্য ব্যাংকগুলো প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারবে। এ বিনিয়োগসুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে তিন মাস সময় দেয়া হয়।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত মাসের ২২ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলার জারি করা হয়। ওই সার্কুলারে বিনিয়োগসীমা যাদের ২৫ শতাংশ নিচে রয়েছে তাদেরকে রেপোর মাধ্যমে (ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে ধার নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথমে ২৮ দিনের জন্য, পরে তা বাড়িয়ে ছয় মাস পর্যন্ত এ ধার নিতে পারবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ ব্যাংকগুলো সাড়া দেয়নি। সার্কুলার জারির এক মাস পার হলেও গতকাল পর্যন্ত মাত্র একটি ব্যাংক এ সুযোগ নিয়েছে। বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক তারা নিজস্ব পোর্টফোলিওএর মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারের পতন ঠেকানোর দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর নয়। ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধ রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে আর শেয়ারের দাম আরো কমে গেলে এর দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে না। এটি ব্যাংকগুলোকেই বহন করতে হবে। আর সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ খাতে একজন সচেতন ব্যাংকার বিনিয়োগ করতে পারে না। অপর দিকে সামনে ব্যাংকগুলোর ডিসেম্বরে ক্লোজিং রয়েছে। অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আয়-ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকানো না গেলে ব্যাংকগুলোর লোকসান আরো বেড়ে যাবে। আর লোকসান বাড়লে ব্যাংকগুলোর মুনাফা দিয়ে তা প্রভিশন করতে হবে। এতে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাবে। যায় দায়ভার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকেই বহন করতে হয়। এ কারণে জেনেশুনে ব্যাংকগুলো এখনই এ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার কার্যকর করার সময়সীমা বাড়ালে ডিসেম্বরের পর এ সুযোগ নিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement