২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অটোরিকশা চালকের মেয়ে ঢাবিতে চান্স পেলেও অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত

বগুড়ার আদমদীঘির মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া বাড়িতে বাবার সাথে -

দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেলেও অর্থাভাবে তার ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তার পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে। সুমাইয়া বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের ঘোড়াঘাট মহল্লার আবদুল আলিমের মেয়ে। তার বাবা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তারপরও সংসারের তাগিদে বাধ্য হয়ে তিনি চার্জার চালিত অটোরিকশা চালান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের মেধা তালিকায় ২২০১ নম্বরে সুমাইয়ার নাম এসেছে। কিন্তু তার ভর্তিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অটোরিকশা চালক বাবা এ মেধাবী সন্তানের জন্য ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারেননি। শুধু ভর্তি নয়, কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েকে পড়ালেখা করাবেন তা নিয়েও তিনি চিন্তিত। আব্দুল আলিম বলেন, ‘সম্পদ বলতে বাড়িটা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। দু’জনেই মেধাবী। অর্থের অভাবে ছেলেকে ভালো জায়গায় পড়াশোনা করাতে পারিনি। বর্তমানে ছেলেটি একটি এনজিওতে স্বল্প বেতনে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করে। দু’জনের আয়ে কোনো মতে সংসারটা চলে।’
মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া জানান, বাবার পক্ষে আমার ভর্তির জন্য এতগুলো টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। বাবা, ভাই ও শিক্ষকরা মিলে যেটুকু অর্থ দিয়েছিলেন, তা তো ভর্তি পরীক্ষার ফরম আর ঢাকা যাওয়া-আসার খরচ মেটাতেই শেষ। খুশি হয়েছিলাম চান্স পেয়ে। কিন্তু ভর্তি বা টাকার চিন্তায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় আমার পূরণ হবে না। তিনি আরো বলেন, কখনো গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে পারিনি। নিজের চেষ্টায় আমি এতদূর এসেছি। এ পর্যন্ত কোনো ক্লাসের সব বই এক সাথে কিনতে পারিনি। কলেজের শিক্ষক অমিত কুমার ও প্রতিবেশী আরেক শিক্ষক মোছাদ্দেক হোসেন অর্থ ছাড়াই পড়িয়ে সহযোগিতা করতেন। ২০১৭ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৭৩ এবং ২০১৯ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছি। ঢাবিতে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াই আমার এখন সব চেয়ে বড় স্বপ্ন।
সান্তাহারে বাংলা প্রাইভেট সেন্টারের শিক্ষক মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, সুমাইয়া ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। লেখাপড়ায় অন্য ছেলেমেয়ের তুলনায় তার মনোযোগ বেশি। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ দেখে বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতা করেছি। আমার মনে হয় সে ঢাবিতে লেখাপড়া করতে পারলে অনেক ভালো ফলাফল করবে। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে তো খরচ চালানো সম্ভব নয়। সান্তাহার সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক অমিত কুমার পাল জানান, সুমাইয়া খুবই মেধাবী। আমরা যতটুকু পেরেছি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। লেখাপড়ায় তার খুবই আগ্রহ। কলেজে তার উপস্থিতিও ভালো ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement