২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় অভ্যস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

শাবিপ্রবির গবেষণা
-

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা তাদেরকে ভয়ানক স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশের কারণে সৃষ্ট থেকে মানসিক চাপ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব তাদের এসবের পেছনে দায়ী। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। শাবিপ্রবি রিসার্চ সেন্টারের সহযোগিতায় পরিচালিত এ গবেষণায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম এবং তৎকালীন শিক্ষার্থী মাহমুদা মোহাম্মাদও যুক্ত ছিলেন।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বিভিন্ন দিক যাচাই করা। ২০১৬-১৭ সালে গবেষণাটি পরিচালিত হয় এবং সম্প্রতি এর ওপর ভিত্তি করে দু’টি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়।
সিলেট শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ (৬১%) শিক্ষার্থীর মধ্যেই স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে। উপরন্তু তাদের খাদ্যগ্রহণের তালিকায় নেই প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণের সামঞ্জস্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারা অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তাদের বেশির ভাগের মধ্যে (৭৫%) শরীরচর্চার প্রচলন নেই বললেই চলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নতুন পরিবেশে নিজের অজান্তে তারা কিছু অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া, ধূমপান করা ও অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে যদিও বলেছেন যে তাদের জীবনযাত্রা পদ্ধতি সঠিক, কিন্তু অনুসন্ধানের ফলাফল বলছে তারাই সুস্থ জীবনধারণের বিষয়ে সচেতন নন এবং সঠিক খাদ্য অভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের ধারণা মূলত ভুল। কারণ এক দিকে যেমন সুষম খাদ্য তালিকা বিষয়ে তাদের সঠিক ধারণা নেই অপর দিকে পরিমিত খাদ্য গ্রহণের প্রচেষ্টার বিষয়ে তারা উদাসীন। তাদের মধ্যে অনেকে (৫৮%) কখনোই তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনে কোনো উদ্যোগ নেননি।
উল্লেখ্য, Stratified Random Sampling-এর মাধ্যমে সিলেটের দুইটি পাবলিক এবং চারটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থীর (৩৫% ছাত্রী ও ৬৫% ছাত্র) আর্থসামাজিক অবস্থা, নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ, জীবনধারা ও সুস্থ জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। গবেষণাটি একটি Cross-sectional গবেষণা এবং এই গবেষণা থেকে দুইটি পেপার International Journal of Adolescent Medicine and Health এবং Journal of Public Health-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে আরো দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী (৫৫%) নিয়মিত সকালের নাশতা করেন না। এ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণ হিসেবে অর্ধেক শিক্ষার্থী (৫০%) ক্লাসের চাপকে দায়ী করছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাভাবিক বিএমআইয়ের (Body Mass Index-BMI) অধিকারী। অনুসন্ধান বলছে যারা নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করছেন না তাদের বিএমআই নিয়মিত খাদ্যগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। যেসব শিক্ষার্থী নিজেরা উপার্জন করছেন তুলনামূলকভাবে তাদের বিএমআই অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি। শিক্ষার্থীদের বয়সের সাথে সাথে তাদের বিএমআই বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনিতেই খেলাধুলার প্রচলন কম, কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করছেন গবেষণার ফলাফল বলছে তারাও স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপারে উদাসীন। অপর দিকে নিয়মিত শরীরচর্চা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম (২৫%)। ৫৬% শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা শুধু দৈনন্দিন কাজকর্মের (নিত্যপ্রয়োজনীয় ঘরোয়া কাজ) সাথে যুক্ত। অনুসন্ধান বলছে অর্ধেকের বেশি (৫৫%) শিক্ষার্থী দৈনিক চার ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটারের সামনে কাটাচ্ছেন।
গবেষণায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অধিকাংশ শিক্ষার্থী দাবি করছেন, তারা মানসিক প্রশান্তির সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্যগ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এ দিকে প্রায় ৮৪% শিক্ষার্থী জানান, একাকিত্বের সময় তাদের মধ্যে খাদ্যগ্রহণে অনীহা দেখা দিচ্ছে।
গবেষণায় সুপারিশ করা হয়, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সভা, সেমিনার, পোস্টার-লিফলেট, ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়মিত জীবনধারা, সুষম খাদ্য ও সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরার কথাও বলা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement