২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আ’লীগ সরকার একদলীয় শাসনের রোল মডেল : মওদুদ

বাংলাদেশ নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সেমিনারে অতিথিরা : নয়া দিগন্ত -

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন নয়, একদলীয় শাসনের রোল মডেল। গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শহীদ আবরার ফাহাদ এবং সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকার বলে তারা উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রহীনতার রোল মডেল বাংলাদেশ, বিচারহীনতার রোল মডেল বাংলাদেশ, একদলীয় শাসনের রোল মডেল হলো বাংলাদেশ, ভোটের অধিকার হরণ করার রোল মডেল হলো বাংলাদেশ, ভোট চুরির রোল মডেল হলো এখন বাংলাদেশ।
বিনা ভোটের সরকার গঠন করার যে মডেল এটা হলোÑ আমাদের রোল মডেল হলো বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোথাও এগুলো পাবেন না যে এরকম একটা রোল মডেল বাংলাদেশে সৃষ্টি করেছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। বেগম জিয়ার সাথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং তার (খালেদা জিয়া) আন্দোলন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন রাজপথে ছাড়া অন্য কোনো পথে কোনো আন্দোলন সফল হয় নাই। আমাদের একটাই পথ রাজপথ। যদি আমরা পারি তাহলে আমরা সফল হবো।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া কখনো প্যারোলে মুক্তি লাভ করবেন না, মুক্তি চাইবেনও না। প্যারোলের কথা যারা বলেন তারা ভুল পথে বলেন, না হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলেন। প্যারোলে নয়, রাজপথেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান কথা উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে কোনো জবাবদিহি সরকার না থাকার কারণেই এটা আছে। দেশে যে সরকার থাকে তাকে জবাবদিহি করতে হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সদস্যসচিব দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী। প্রবন্ধে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদসহ সারা দেশে গুম-খুন-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্রসহ দেশের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ৪৮ বছরে এ দেশে এত দুর্বল, এত জালিম সরকার আর কখনো আসে নাই। মানুষ শুধু খুঁজছে, প্রতিবাদ করতে চায় তারা। কার পেছনে প্রতিবাদ করবে? কেউ যদি মনে করেন, জনগণ আমাদের সাথে আসে না; যদি মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের এই কক্ষে বসে বক্তৃতা করলে জনগণ আমাদের সাথে আসবেন। খুবই সত্যি কথা হলো এই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলেন তাদের অনেকেই জানেন আমরা এখানে সভা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আবরারের স্ট্যাটাস যারা দেখেছেন, ওই সময়ে খুনিরা যেসব কথাবার্তা বলেছে সমস্ত দেখে এটা স্পষ্টÑ বাংলাদেশের চালচিত্র যারা জানেন সেখান থেকে এটা স্পষ্ট যে আবরার মারা গেছে দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য, আবরার মারা গেছে ভারতের বিপক্ষে কথা বলার জন্য।
তিনি বলেন, এখন কোনো খুনির পক্ষে যত বড় শয়তানই হোক না কেন, তার তো এভাবে একজনকে মেরে ফেলা সম্ভব না। কাউকে মেরে ফেললাম, কেন মেরেছে? ভারতের বিপক্ষে কথা বলেছে দেখে মেরে ফেলেছি বা দেশের পক্ষে কথা বলেছে বলে মেরে ফেলেছিÑ এটা তো সম্ভব না। সেজন্য তাদের প্রয়োজন হয় একটা ট্যাগ লাগানো। যাকে মারবে বা হত্যা করবে তাকে একটা ট্যাগ লাগাবে। সেই ট্যাগটা কী? জামায়াত-শিবির। এই ট্যাগ শুধু আবরারকে নয়, বাংলাদেশের বহু মানুষকে লাগানো হয়েছে, বাংলাদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রকে পিটিয়ে হল ছাড়া করা হয়েছে, কাউকে কাউকে মেরে ফেলা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই ট্যাগটা লাগানো কেন সম্ভব হলো? পত্রিকায় অসংখ্যবার পড়েছিÑ জামায়াত-শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হল ছাড়া করা হয়েছে, জামায়াত-শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ করেছে তাদের ফেসবুকেও দিয়েছে। এসব নিউজ পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী, যারা সুপ্রিম কোর্টে আছেন, আপনারা কি আদালতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, জামায়াত-শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হলোÑ এটা কি বাংলাদেশের আইন আছে? আপনারা একজনও কি আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন?
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কী কোনো আইন আছে যে, জামায়াত করলে, শিবির করলে তাকে পেটানো যাবে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে, তাকে মেরে ফেলা যাবে, তাকে হল থেকে বের করে দেয়া যাবে। আমাদের সংবিধানে এরকম কি আইন আছে? আপনারা এত ল’ইয়ার আছেন, আপনারা কেন আদালতে বিচারকের কাছে গিয়ে বললেন না, শিবির সন্দেহ কি কাউকে পিটিয়ে মারতে পারবে? যদি না থাকে এটা সংবিধান লঙ্ঘন কেন হবে না?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনে কারো মোবাইল-ল্যাপটপ চেক করার ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেয়া হয় নাই, কাউকে শিবির সন্দেহে পেটানোর ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেয়া হয় নাই, হল থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি। তারা যদি জানে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে কাজ করছে পুলিশের কাছে ইনফর্ম করতে পারবে। এটা ছাড়া কোনো আইন বাংলাদেশে নাই।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নীর পরিচালনায় সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি সারিতে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিলকিস শিরিন, শিরিন সুলতানা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার আবু আশফাক, মাহবুবুল হক নান্নু, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আবদুল আউয়াল খান, খন্দকার মাশুকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ বিভিন্ন পেশার নেতাকর্মীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement