একদিন বিদেশী পর্যটকেরাও আসবেন এখানে : রাষ্ট্রপতি

রাাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘আজকে আমার বুক ভরে যায়, ভালো লাগে, যখন ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই হাওর এলাকা দেখার জন্য মানুষ ছুটে আসছে। ফেসবুকে দেখি, আমাদের সাবমার্সেবল রোড (ডুবু সড়ক), অলওয়েদার রোড, অষ্টগ্রামের ব্রিজ দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ আসছে। এগুলোর আমি খবর পাই, আর আপনারা প্রত্যক্ষ করেন। হাওর সাজানো হচ্ছে, যখন আরো সাজানো হবে, আরো গোছানো হবে, তখন বিদেশী পর্যটকরা আসবেন এই হাওরে। সে জন্য হাওরের সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সাবেক নির্বাচনী এলাকা অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরের অষ্টগ্রাম খেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। কিশোরগঞ্জ জেলায় রাষ্ট্রপতির এক সপ্তাহব্যাপী সফরের ষষ্ঠ দিনে এলাকার জনগণের উদ্যোগে এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন বন্ধুবান্ধবদের যখন বলতাম, ‘চলো আমাদের এলাকায় হাওরে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই’। তখন তাদের নাক বেশ উঁচু ছিল। তারা বলত, হাওরে গিয়ে কী করব, কী দেখব? কত অবহেলা, অবজ্ঞা আমাদের করত। তাদের দাওয়াত দিয়ে আনতে চাইলেও তারা আসতে চাইতো না। এখন আমাদের অবহেলা করার আর সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন আমি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার রোডের কাজ শুরু করলাম। তখন বিভিন্ন বড় লোকেরা কেউ এক শ’ একর, তিন শ’ একর, পাঁচ শ’ একর এমনকি এক হাজার একর পর্যন্ত জমি কেনা শুরু করল। এ ধরনের কথা যখন শুনলাম, আমি নেতৃবৃন্দকে বলেছি, কর্মকর্তাদের বলেছি, হাওরে জমি কেনাবেচা চলতে পারে। কিন্তু অষ্টগ্রামের জমি অষ্টগ্রামের মানুষ কিনতে পারে, ইটনার জমি ইটনার মানুষ কিনুক তাতে কোনো সমস্যা নেই, মিঠামইনের মানুষ মিঠামইনের জমি কিনতে পারে। তবে কোনো রাঘব বোয়াল যেন যারা এসব জমি খেয়ে ফেলবে তারা যেন কিনতে পারে না। কোনো রাঘব বোয়ালকে হাওরের জমি কিনতে দেয়া হবে না।’
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ হাওর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ও এর সুফল প্রসঙ্গে বলেন, বিগত বছরগুলোতে হাওরে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে। হাওরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সাবমার্সেবল রোড, সারা বছর চলাচল উপযোগী অলওয়েদার রোড ও ঘরে ঘরে বিদুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। হাওরবাসী একসময় এসব ভাবতেও পারত না। কিন্তু আজ সবই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে হাওরবাসী। কাজেই এ উন্নয়ন রক্ষা করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো: আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো: জিল্লুর রহমান, অষ্টগ্রাম সরকারি রোটারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজতাবা আরিফ খান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চু। এ সময় প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো: জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হকসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুধী সমাবেশে যোগদানের জন্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ দুপুরে ইটনা থেকে হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রাম যান। অষ্টগ্রামের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে রাতযাপন শেষে সপ্তাহব্যাপী সফরের শেষ দিন আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রপতি অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করবেন। দুপুর আড়াইটায় তিনি হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে অষ্টগ্রাম ত্যাগ করবেন।