১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চলতি মাসেই ২৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যুবদলের

-

মাত্র পাঁচ নেতার নেতৃত্বে চলছিল বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আর বাকি আছে মাত্র তিন মাস। দীর্ঘ এই সময়ে আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। অবশেষে চলতি অক্টোবর মাসেই তিন মাসের জন্য ২৭১ সদস্যের যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে সরাসরি কাউন্সিলের দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। অবশ্য যুবদলের বর্তমান কমিটিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৩৩ মাসেও তা করতে ব্যর্থ হন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে যুবদলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে কমিটি হচ্ছে-হবে বলে শুধু আশ্বাসই দেন তারা। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে বহুবার দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই আবার কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি জানান। কিন্তু ছাত্রদলের কমিটি নিয়েই হিমশিম খাচ্ছিল বিএনপির হাইকমান্ড। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ নির্বাচিত হন। এখন অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও পূর্ণাঙ্গ বা কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করতে চায় বিএনপি।
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি। সংগঠনের গতি বৃদ্ধি করা ও ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় আংশিক (নীরব-টুকু) এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপির হাইকমান্ড। এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং যারা নেতৃত্বে এসেছেন তারা প্রায় সবাই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে ৩৩ মাসেও পূর্ণাঙ্গ তো দূরে থাক আংশিক কমিটিতেই আটকা যুবদল। বর্তমানে সংগঠনের অভ্যন্তরে আধিপত্য বিস্তার এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ায় দলীয় কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, শীর্ষ নেতাদের মনোমালিন্যের কারণেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। একসময়ের তারুণ্যনির্ভর ও সক্রিয় যুবদলের এখন ভগ্নদশা। নেতাকর্মীরাও প্রায় কার্যালয় বিমুখ। কর্মসূচি পালন করছেন দায়সারাভাবে। পদে আসা নেতারা ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া সংগঠনে কারো খোঁজখবর রাখছেন না। ফলে বেশির ভাগ তৃণমূল নেতারা রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে দিন দিন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। সেই সাথে বাড়ছে ক্ষোভ আর হতাশা। তৃণমূলের কয়েকজন নেতা আলাপকালে বলেন, যুবদল এভাবে চলতে থাকলে সংগঠন বলে কিছুই থাকবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করলে সংগঠনটি আরো গভীর সঙ্কটে পড়বে।
অবশেষে আংশিক কমিটি গঠনের ৩৩ মাস পর যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে। গত বুধবার রাতে যুবদলের নেতাদের সাথে স্কাইপে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই বৈঠকে যুবদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির শীর্ষ পাঁচজন নেতা, মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি এবং মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সেক্রেটারি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা না করা কিংবা কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তারেক রহমান যুবদলের কাউন্সিলের কথা বললে সংগঠনের বর্তমান নেতৃবৃন্দ তাকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানান। এ সময় তারা বুঝিয়ে বলেন যে, কাউন্সিল হলে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বাদ পড়বেন। যারা কোনো পরিচয় দিতে পারবেন না। অন্তত এক মাসের জন্যও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে অনেকেই পদ পেয়ে পরবর্তীতে রাজনীতি ভালোভাবে করতে পারবেন। দলের চলমান সঙ্কটময় মুহূর্তে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করাটা খুবই জরুরি। তা হলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব। একপর্যায়ে তারেক রহমান আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি; অর্থাৎ তিন মাস পরই কাউন্সিলের মাধ্যমে যুবদলের নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে বলে তারেক রহমান যুবদলের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন।
জানতে চাইলে যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ পেয়েছি। এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করে বিএনপির কাছে জমা দেবো ইনশা আল্লাহ।
জানা যায়, বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন শুধু পাঁচজন নেতা। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির নেতারা হলেনÑ সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহসভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন, সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা কামাল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন জুয়েল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটির নেতাদের মধ্যে সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, সিনিয়র সহসভাপতি শরিফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন সাইদ হাসান মিন্টু, আরটি মামুন ও আনন্দ শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান শাহীন।

 


আরো সংবাদ



premium cement