২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাকৃবিতে সায়াদ হত্যা মামলা ৭ আসামি অব্যাহতির পর বিচার কার্যক্রম স্থগিত

-

২০১৪ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি সায়াদ ইবনে মোমতাজকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখন ময়মনসিংহের চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গতকাল বুধবার মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের হাজিরার দিন ধার্য থাকলেও কেউ হাজির হয়নি। এ দিকে অভিযোগ গঠনের সময় সাতজন আসামিকে অব্যাহতি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অন্যদের দায়ের করা রিভিশনের পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করায় বিচার কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অনুষদীয় সহসভাপতি নির্বাচন ও ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সায়াদের সহপাঠী একই হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডু ও রোকনুজ্জামানের সাথে ‘মনোমালিন্য’ হয়। এরই জেরে আশরাফুল হক হলের ২০৫ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে ‘শিবির কর্মী’ আখ্যা দিয়ে সায়াদকে স্ট্যাম্প, লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নিহত সায়াদ রাজশাহী জেলার রাজপাড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া গ্রামের মোমতাজ উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকাল বিভাগের অধ্যাপক ড. মহসীন আলীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সায়াদ ইবনে মোমতাজের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গোটা ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়ে। দু’জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সুজয় ও রোকনকে গ্রেফতার করলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
সায়াদ ইবনে মোমতাজ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিলেন একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু একই হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডু ও রোকনুজ্জামান সায়াদকে রেজার হাতে তুলে দেন। ঘটনায় জড়িত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল শাহাদাত রাসেল, বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবুর ভাতিজা ছাত্রলীগ ক্যাডার সাদেকুর রহমান খান স্বপন (ক্যাম্পাসে ‘ভাতিজা স্বপন’ হিসেবে পরিচিত), শাহজালাল হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার সুমন পারভেজ, জামাল হোসেন হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার ফয়সাল ইসলাম জয়, আশরাফুল হক হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার দেওয়ান মুহাম্মদ মুনতাকা মুফরাত, প্রশান্ত কুমার দে, মাহমুদ হাসান রিয়াদ, পশুপালন অনুষদের মো: মনোয়ারুল ইসলাম নয়ন, মো: রোকনুজ্জামান রোকন, মো: মিজানুর রহমান শাওন ও অন্তর চৌধুরী। এই ১৪ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
বাকৃবি সিন্ডিকেট কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের আশরাফুল হক হলের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও একই হলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডু ও রোকনুজ্জামানকে আজীবন বহিষ্কার করেন। এ ছাড়া কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ও একই হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল শাহাদাত রাসেল ও ছাত্রলীগ কর্মী দেওয়ান মুনতাকা মুফরাতকে চার বছরের জন্য এবং পশু পালন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা অন্তর চৌধুরীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে। ২ এপ্রিল সায়াদ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রোকনুজ্জামান ও সুজয় কুমার কুণ্ডুুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরদিন গ্রেফতারকৃতরা পুলিশ এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠায়।
১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় আদালত রেজাউল করিম রেজা, নাজমুল শাহাদাত রাসেল, ফয়সাল ইসলাম জয়, দেওয়ান মুহাম্মদ মুনতাকা মুফরাত, মাহমুদ হাসান রিয়াদ, মনোয়ারুল ইসলাম নয়ন ও অন্তর চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন। আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে অন্যরা হাইকোর্টে রিভিশন পিটিশন দায়ের করলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। দুই বছর ধরে মামলাটির কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না। আসামিদের কেউ কেউ এখনো ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। কয়েকজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে চাকরি করছে।
মামলার বাদি বাকৃবি নিরাপত্তা শাখার প্রধান মহিউদ্দিন হাওলাদার মামলাটির কোনো খবরই রাখেন না। তিনি জানান, কোর্ট থেকে ডাকলে আদালদে যাই। অনেক দিন ধরে ডাকে না, আমিও যাই না। মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement