২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের দ্বার খুলে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক ৯২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংকগুলো

-

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ দ্বার খুলে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা বাড়তি ৯২ হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে (রেপো) অর্থের সংস্থান করতে পারবে। ওই অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে পুঁজিবাজারে লেনদেন করতে পারবে। এ জন্য ব্যাংকগুলো সময় পাবে ২৮ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস। পুঁজিবাজারে এ বিনিয়োগ সুবিধা পেতে আগামী তিন মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এ বিষয়ে গতকাল একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত নিলে সাড়ে ৮১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। বাকি সাড়ে ১৮ টাকা বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করতে হয়। মূলত আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থেই এমন বিধান রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। সাড়ে ১৮ টাকার মধ্যে সাড়ে ৫ টাকা নগদে সংরক্ষণ করতে হয়। যাকে ব্যাংকিং ভাষায় সিআরআর বা নগদ জমার হার বলে। বাকি ১৩ টাকা সম্পদ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। আর এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় এসএলআর বলে। এ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড। সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ করে। ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের যে পরিমাণ ঋণের জোগান দেয়া হয়, তার বিপরীতে সরকার ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড সরবরাহ করে থাকে। সাধারণত সরকার স্বল্প সময় অর্থাৎ ১ বছরের কম সময়ের জন্য ঋণ নিলে এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল দেয়া হয়। আর এক বছরের বেশি সময় অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২০ বছরের জন্য ঋণ দিলে তার বিপরীতে বন্ড সরবরাহ করা হয়।
অনেক সময় এসএলআর সংরক্ষণের জন্য যে পরিমাণ ট্রেজারি বিল ও বন্ডের প্রয়োজন হয় তার চেয়ে বেশি বিল ও বন্ড সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলো। সাধারণত, বিনিয়োগ নিরাপদ করতে ও অনেক সময় বাধ্যতামূলক সরকারের ঋণের জোগান দিতে গিয়ে অতিরিক্ত বিল ও বন্ড থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন ব্যাংকগুলোর হাতে এমন ৯২ হাজার কোটি টাকার বিল ও বন্ড অতিরিক্ত আছে।
এ দিকে টাকার সঙ্কট হলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ব্যাংকগুলো ধার করতে পারে। আর এটাকে কলমানি মার্কেট বলে। সাধারণত ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে এ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ব্যাংকগুলো লেনদেন করে থাকে। কিন্তু টাকার সঙ্কট বেশি হলে আর কলমানি মার্কেটে ধার দেয়ার মতো কোনো ব্যাংক না থাকলে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে নগদ অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় রেপো বলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ব্যাংকের নগদ অর্থের সঙ্কট রয়েছে। এ নগদ অর্থের কারণে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ দিকে পুঁজিবাজারেও তারল্য সঙ্কটের কারণে প্রতিদিনই বিভিন্ন শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। পুঁজিবাজারে তারল্য সুবিধা দেয়ার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে অর্থের সংস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত সার্কুলারে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে ওইসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে অর্থ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সুদ গুনতে হবে ৬ শতাংশ হারে। প্রথমে ২৮ দিনের জন্য এ সুবিধা দেয়া হবে। এ সময়ে ব্যাংকগুলো তহবিল ব্যবহার করতে পারলে সময়সীমা ২৮ দিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত বাড়ানো হবে। তবে, এ জন্য ব্যাংকগুলো ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করতে পৃথক বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ সুবিধা নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ সুবিধার ফলে পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ বেড়ে যাবে। এতে একটি গতিশীল পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।


আরো সংবাদ



premium cement