১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রকল্পের টাইমলাইন মানা উচিত : তাজুল ভারত ও চীনের প্রবেশপথ বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে এডিবি

-

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, ভারত-চীনের প্রবেশমুখ বাংলাদেশ। চীন, ভুটান ও নেপালের দক্ষিণে প্রবেশপথও এই বাংলাদেশ। ভালো করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এবং এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করব, কিভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগানো যায়। আর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, যখন কোনো একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তখন এটির টাইমলাইনে বাস্তবায়ন ও কাজের মান ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্পন্ন পরিকল্পনা ও নকশা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে প্রকল্পের খরচ কমানোও অপরিহার্য।
রাজধানীর একটি হোটেলে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে গতকাল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিন দিনব্যাপী এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (এডিবি শাখার প্রধান) ফরিদা নাসরিন। এডিবির ৬৮টি সদস্য দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন হয়েছে ঢাকায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে এডিবির দেয়া ঋণে বাংলাদেশে ৫৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। দেশ সব সময় গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমাদের সমাজে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে প্রত্যেক জায়গায় সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদী যে, তিনি এ দুর্নীতি রুখবেন।
বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তাজুল ইসলাম বলেন, নিয়মিতই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ আসে প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধে। আমি নিজেও একজন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। আশা করি, প্রকল্প পরিচালকরা আরো বেশি যতœশীল হবেন। যখন কোনো প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তার উচিত সেই প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা, কাজের মানও ঠিক রাখতে হবে। তিনি যেন কোনো সমালোচনার মুখে না পড়েন। তিনি বলেন, বিদেশী সংস্থা-রাষ্ট্র বিনিয়োগ করলে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুন্দর অতীত রয়েছে। আমাদের জনবল রয়েছে। রয়েছে ভূমিও। আমাদের এখন বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগকারী লাভবান হবে, দেশও লাভবান হবে। এডিবি বিনিয়োগ করলে আমাদের পাশাপাশি তারাও লাভবান হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে মনমোহন প্রকাশ বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের পূর্বাংশের প্রবেশপথ বাংলাদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিসংস্থার (আশিয়ান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা) প্রবেশপথ এবং চীন, ভুটান ও নেপালের দক্ষিণে প্রবেশপথও এই বাংলাদেশ। ভালো করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এবং এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করব কিভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগানো যায়। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করেছে। এই সময়ে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন প্রবৃদ্ধির মডেল হিসেবে দেখা হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের পথে রয়েছে দেশটি।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। পোশাকশিল্পে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় রফতানিকারক। তৃতীয় বৃহত্তম শাকসবজি উৎপাদক, চতুর্থ ধান উৎপাদক এবং বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। অল্প যে কয়েকটি দেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। গত এক দশকে অতিদারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে এখানে। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা ও নারী শিক্ষার হার বেশি। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ মেয়ে শিশু প্রাথমিক শিক্ষা নিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও তারা সফল। মানব উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এডিবি ৪৬ বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে। এডিবির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ বাংলাদেশে। বর্তমানে এডিবির দেয়া ঋণে বাংলাদেশে ৫৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 


আরো সংবাদ



premium cement