২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

৫ম দিনে বশেমুরবিপ্রবির ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন আরো জোরদার ভিসির অডিও ক্লিপস ভাইরাল

-

এই তোর আব্বা কী করে? তোর আব্বারে ভিসি বানায় দি (বানিয়ে দেই)। দেখি তোর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চালায়। কী আগুন জ্বালাবি এ জানায়োর। এ কী আগুন জ্বালাবি, কেন জ্বালাবি, কোন কোন জায়গা জ্বালায় আইছিস (এসেছিস)। তোরে তো এখন লাথি দিয়ে বের করে দিতে (দিতে) ইচ্ছা করতিছে (করছে)। এ কোনডারে (কোনটাকে) ছাড়বেন। এর একটা থেকে আর একটা বেশি। এদের কথা শুনলি (শুনলে) মরা মানুষ তাজা হয়ে যাবে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে এমনভাবে গালমন্দ করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। তার পাশে বসে কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুকে কী স্ট্যাটাস দিয়েছে, তা পড়ে শোনাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো: আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া। শুধু ওই সব শিক্ষার্থীকেই নয়। তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনেও শোনানো হয়েছে কটু কথা। করা হয়েছে অপমান। এমন এক অডিও ক্লিপস গতকাল রোববার থেকে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
প্রক্টর এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ছিলেন; স্যার ও লিখেছে প্রতিবাদ করলে বহিষ্কার করবে তো? করুক, কয়েকজনকে বহিষ্কার করবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি। এ কথা শুনে ভিসি বলেন, তয় তুরা (তোরা) চালা আইসা (এসে) ইনভারসিটি (ইউনিভার্সিটি)। তোর বাপরা (বাবারা) আইসা, মা’রা আইসা চালাক। আমরা ছাইড়া (ছেড়ে) দি। এ যা বাইর (বের হ); যা বের হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা বারবার ক্ষমা চাইছিলেন। তাতেও থামছেন না ভিসি। তোর আব্বারে আইনা (এনে) চালা। তোর আব্বা বানাইছে বিল্ডিং? ১০৩ রুম কারে দেবো, তোর কাছে শোনব? তোর কাছে শোনব না তোর মা’র কাছে শোনব। ১০৩ নম্বর নিয়ে তোর এত হেডেক ক্যান। ওই রুমডা (রুমটা) কি তোর আব্বার? এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছিল এক শিক্ষার্থীর মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়ার আকুতি। এটি শুনে ভিসি বলছেনÑ এ আপনার ছেলে কোনডা (কোনটা)? কী করেন আপনি? ও শিক্ষক আপনি? আপনার ছেলে লেখছে (লিখেছে) কিন্ডারগার্টেন এটি। কিন্ডারগার্টেনে আপনার ছেলেকে ভর্তি করছেন কেন? এ কিসের জন্য কিন্ডারগার্টেন লেখছিস। লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দেবো এই যায়গা থেকে। এ জানোয়ার। তোর চৌদ্দ পুরুষের সাধ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তুই তো জীবনেও চান্স পাতি না। আমি এ বিভাগ খুলছিলাম (খুলেছিলাম) বলে তুই চান্স পাইছিলি (পেয়েছিলে)। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ জায়গায় কী কী খারাপ তুই ক। তোর শাস্তি অবেই (হবেই)। সবাই যদি কয় কেজিতি পড়ি। তলিতো আমি ভিসি থাকি না। আমি তো হেড মাস্টার হইয়া যাই।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এ ক্ষোভ এক দিনের নয়। ভিসি স্যার বিশ্ববিদ্যালটিকে টর্চার সেলে পরিণত করেছেন। কোনো শিক্ষার্থী ভিসি স্যারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের এবং অভিভাবকদের ডেকে গালিগালাজসহ মানসিক টর্চার করেন। এ থেকে বাদ যান না শিক্ষকেরাও। ওনার এসব কর্মকাণ্ডের সাথে প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত।
এ দিকে গতকাল পঞ্চম দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসির পদত্যাগের এক দফা এক দাবির অনশন কর্মসূচি আরো জোরদার হতে দেখা গেছে। দুপুরে আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল হামিদ। এ সময় তিনি বলেন, গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, আমরা জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে থাকবে। পরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তা শিক্ষার্থীরা মেনে না নিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতক্ষণ আমাদের আশ্বস্ত না করবেন, ততক্ষণ আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement