২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসময়ে গৌড়মতি আম

-

অন্য সব গাছের আম যখন শেষ, তখন এ সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ‘গৌড়মতি’ আমের মওসুম। নতুন উদ্ভাবিত এ আমের বাণিজ্যিক চাষে সফল হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গোলাম মওলা।
২০১২ সালে এ জাতের আম উদ্ভাবনের পরের বছরে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগরের খামারে মাত্র আটটি চারা দিয়ে গৌড়মতির চাষ শুরু করেন গোলাম মওলা। প্রথমবার ফলন পান চার মণ। সেপ্টেম্বরে আমের ‘অফ সিজন’ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এ আম বিক্রি করেন ৫০০ টাকা কেজি দরে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় গোলাম মওলা এর পরিধি বাড়াতে তৎপর হন। বর্তমানে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে গৌড়মতির বাগান করেছেন তিনি। ২৪ বিঘার গৌড়মতির বাগানে দুই হাজার গাছ আছে। এগুলোর মধ্যে চলতি মওসুমে ১০০ গাছে আম ধরেছে। কেজিপ্রতি আম বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা করে।
স্থানীয় বাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গোলাম মওলার খামারের আম পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্মারক শুভেচ্ছা হিসেবে এ গৌড়মতি আম গেছে প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দফতরেও। অসময়ের আম হওয়ার কারণে চাহিদার ব্যাপকতার কারণে এগুলো বিক্রি করতে কোথাও যেতে হয়নি তাকে। আগ্রহীরাই বাগানে এসেই কৌতূহল ভরে আমের ফলন দেখছেন আর কিনছেন আম।
নাটোরের সফল ফল চাষি কলেজ শিক্ষক গোলাম মওলার জামনগরের খামার রকমারি ফলের গাছে সমৃদ্ধ। বলা চলে, জার্মপ্লাজম সেন্টার। তবে বর্তমানে খামারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ গৌড়মতি আমগাছ। এক একটি আমের গড় ওজন ৭০০ গ্রাম।
গোলাম মওলা আমকে কীটনাশকমুক্ত ও সম্পূর্ণ অর্গানিক রাখতে ব্যাগিংয়ের পাশাপাশি নেট দিয়ে আমের গাছগুলোকেও ঘিরে রেখেছেন। ফল উৎপাদকদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত বলে কৃষিবিদরা মনে করেন।
গৌড়মতির পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজনে খামারে চারা উৎপাদন করে আগ্রহীদের কাছে সে চারা বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, দেশের আড়াই শতাধিক প্রজাতির আমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিষ্টতা রয়েছে এ গৌড়মতি আমে। মিষ্টতার মাত্রা ২৭ টিএসএস। গৌড়মতির চাষে অনন্য অবদান রেখেছেন গোলাম মওলা।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক এস এম কামরুজ্জামান এবং প্রকল্প পরিচালক মেহেদী মাসুদ সম্প্রতি গোলাম মওলার গৌড়মতির খামার পরিদর্শন করেছেন। গৌড়মতি আমের উদ্ভাবনের ইতিহাস সম্পর্কে এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে কিছু আম পাঠানো হয়। অজ্ঞাত প্রজাতির এই আম খেয়ে মুগ্ধ হন মন্ত্রী। এ কথা কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে জানতে পারেন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক। এরপর ওই আমের গাছ শনাক্ত করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকার শিয়ালমারা এলাকায়। জাহাঙ্গীর মাস্টারের আশ্বিনা আম বাগান থেকে সংগৃহীত ওই গাছে তখনো কয়েকটি আম ছিল। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় আটটি আম। শুরু করা হয় প্রকল্পের পক্ষ থেকে এই গাছের চারা উৎপাদন কার্যক্রম। পরের বছর মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে ওই গাছের সব আম কিনে নেয়া হয়। আর ওই বাগানেই দেশের ৬০টি হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে বসে বৈঠক। বৈঠক শেষে এই গাছের আমের চারা তৈরির জন্য সবার হাতে তুলে দেয়া হলো গাছের সায়ন (কলম করার উপযোগী গাছের কচি ডগা)। এরপর থেকে সব হর্টিকালচার সেন্টারে তৈরি হতে শুরু করে এ গাছের চারা। এখন এসব চারা ফল দিতে শুরু করেছে।
এ আমের নামকরণ সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ফল গবেষক এস এম কামরুজ্জামান বলেন, প্রাচীন বাংলার গৌড় এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবস্থান হওয়ায় গৌড় শব্দটি এসেছে আর মতি হচ্ছে মহামূল্যবান। এই দু’য়ের সমন্বয়ে উদ্যানতত্ত্ববিদদের ওই বৈঠকে আমার প্রস্তাবনায় নামকরণ করা হয় গৌড়মতি।


আরো সংবাদ



premium cement