২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি লালমনিরহাটের ১৬ গ্রাম প্লাবিত : পুকুর-জলাশয় কাঁচা সড়ক ভেসে গেছে

-

অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেছে। এতে নীলফামারী ও লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তিস্তা তীরবর্তী লালমনিরহাটের ১৬টি গ্রাম এতে তলিয়ে গেছে। রোপা আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। কাঁচা সড়ক পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, অবিরাম বর্ষণ ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে হাতীবান্ধার ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা কমে ১৮ সেমি. দাঁড়িয়েছে। তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার চারটি উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, সিংগীমারী, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া। এ ছাড়াও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভাণ্ডার ও কাকিনাসহ জেলার ১১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ফসলি জমি। পুকুর জলাশয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে গত মঙ্গলবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের ধুবনী এলাকায় কাঁচা সড়কের প্রায় ৫০ মিটার অংশ পানির তোড়ে ভেসে যায়। এতে ওই ইউনিয়নের পশ্চিম ধুবনী, ধুবনী, পূর্ব সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্নাসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন তিস্তা তীরবর্তী মানুষ। ফলে সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি ও আগাম আমনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। অনেক কৃষক সবজি ও আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে উজানের ঢলে গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর পর থেকে পানি কমতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সকাল ৯টায় ১৮ সেন্টিমিটার এবং দুপুর ১২টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং বেলা ৩টায় ২২ সেন্টিমাটর কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার।
নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে।
পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, নদীর পানি বৃদ্ধিতে তার ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। একইভাবে উপজেলার নদীতীরবর্তী পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। দুপুরের পর থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ওই সব গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীর পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ৯টার দিকে বিপৎসীমা অতিক্রম করে বুধবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকে নদীর পানি কমে বিকেল ৪টার থেকে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ঢলের পানি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের সব ক’টি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement