১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার শিপ সার্ভেয়ারকে বাঁচাতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট মাঠে

তদন্ত শেষ হচ্ছে না ৪ বছরেও!
-

নৌপরিবহন অধিদফতরের শিপ সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার (জাহাজ জরিপকারক ও পরীক্ষক) মির্জা সাইফুর রহমানকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতারের পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো দুদকের এই গ্রেফতারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রভাবশালী কেউ কেউ সরব হয়ে উঠেছে। নৌ মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক এই সিন্ডিকেট যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। গ্রেফতারকৃত এই সাইফুরের দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দুদক চার বছর আগে তদন্ত শুরু করলেও সিন্ডিকেটের অসহযোগিতার কারণে শেষ করে মামলা দায়ের করতে পারেনি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া দুদক তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি চার বছরে।
গত ২ সেপ্টেম্বর দুদকের একটি টিম নৌপরিবহন অধিদফতরে অভিযান চালিয়ে ঘুষের দুই লাখ টাকাসহ শিপ সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমানকে হাতেনাতে আটক করে। ‘জাহাজের সার্ভে-সংক্রান্ত সনদ দেয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে দুই লাখ টাকা নেয়ার সময় তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়’ বলে দুদক সচিব দেলোয়ার বখত ওই দিন এক ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে জানান। এক অভিযোগকারীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে তারা মির্জা সাইফুরের অফিসে অভিযান পরিচালনা করেন। গ্রেফতারকৃত সাইফুরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার তার জামিন আবেদন নাকচ করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের বিধান থাকলেও রহস্যজনক কারণে কার্যকর করছে না নৌ মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন অধিদফতরের থেকে জানা গেছে, সদরঘাট নৌবন্দরে সাইফুর রহমানের পদে একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ দিকে সাইফুর রহমানকে গ্রেফতারের ঘটনায় নড়েচড়ে উঠেছে নৌ পরিবহনকেন্দ্রিক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। ঘুষের বিষয়টি আড়াল করতেই সিন্ডিকেট উল্টো অভিযান পরিচালনাকারী দুদক কর্মকর্তাদের বিতর্কিত করার মিশন শুরু করেছে। অধিদফতর থেকে পাঠানো সাইফুরকে গ্রেফতার ঘটনার বিবরণীকে পুঁজি করে মন্ত্রণালয় তাকে রক্ষার নানা রকম আইনি ফাঁক খুঁজছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
গ্রেফতার মির্জা সাইফুরের দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ চার বছর আগে বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়। তার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নৌ যান সার্ভে এবং রেজিস্ট্রেশনে ভয়াবহ দুর্নীতি, নকশা ছাড়াই ভুয়া ও জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে নৌযান রেজিস্ট্রেশন করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি চার দশকের পুরনো জাহাজ নতুন দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেছেন এমন অভিযোগও আছে। এসব নিয়ে দুদকের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মন্ত্রণালয়ের আনুকূল্যে এবং আইনের ফাঁক গলিয়ে তিনি বারবার পার পেয়ে গেছেন।
অন্য দিকে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মায় স্মরণকালের লঞ্চডুবিতে শতাধিক যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনায় সাইফুরের সংশ্লিষ্টতা বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়। অভিযোগ মতে, পিনাক-৬ নামের ওই নৌযানটিতে অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মির্জা সাইফুর বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এটিকে দফায় দফায় যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তার আগে ওই বছরের মে মাসে মুন্সীগঞ্জে এমভি মিরাজ-৪ নামে একটি লঞ্চ ডুবে ৫৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ ওই নৌযানটিরও সার্ভের দায়িত্বে ছিলেন মির্জা সাইফুর। এসব অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। উচ্চপর্যায়ে দেনদরবারের মাধ্যমে বরখাস্ত আদেশটি একপর্যায়ে প্রত্যাহার হওয়ার পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রত্যাহার আদেশটি স্থগিত করা হয়।
দুদক সূত্র মতে, শিপ সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুরের বিরুদ্ধে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান নিবন্ধন এবং অবৈধভাবে সার্ভে সনদ দিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তদন্তে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে এমভি বোরহান কবির যার সাবেক নাম এমভি জয়খান-৫ এবং এম.এল বাদল সাবেক নাম এম.এল রুমা নৌযান দু’টি প্রায় চার দশকের পুরনো। স্ক্র্যাপ করার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেগুলো নতুন হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। অন্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নৌযানগুলোর গ্রসটন কম ধরে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। নৌযানগুলোর নকশার সাথে বাস্তব কাঠামোর কোনো মিল নেই। অনেক নৌযানের ডক সনদ এবং ভ্যাট আদায়ের ছাড়পত্র ভুয়া। তবে এ তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে শুরু থেকেই একটি চক্র তৎপর। এরা বিভিন্ন কূটকৌশলের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে চাইছে। দুদকের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের গৃহীত পদক্ষেপে এ অভিযোগ দৃঢ়তা পেয়েছে।
জানা গেছে, মির্জা সাইফুরের বিরুদ্ধে নৌযান রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে সহায়তা চেয়ে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর এবং ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয় দুদক। দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠির সাথে ৫৭টি নৌযানের তালিকা সংযুক্ত করে সেগুলো সরেজমিন যাচাইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। একই সাথে নৌযান রেজিস্ট্রেশন কাজে পারদর্শী তিন সদস্যবিশিষ্ট টিম গঠন করে অবহিত করার জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে চিঠিতে আরো বলা হয়, নিয়োজিত প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাস্তব যাচাই কাজের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তার পিআরএর পর তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো: শামসুল আলম ২০১৮ সারের ৪ ফেব্রুয়ারি দুদক মহাপরিচালকের কাছে অপর এক পত্রে প্রতিবেদন প্রদানের অনুরোধ জানান। আজো অধিদফতর থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
এ দিকে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার মো: মুঈন উদ্দিন জুলফিকারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন মো: হুমায়ুন কবির ও মো: শাহরিয়ার হোসেন। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিউর রহমান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।


আরো সংবাদ



premium cement
ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ১ হাজার টাকার জন্য পেশাদার ছিনতাইকারীরা খুন করে ভ্যানচালক হারুনকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় : মতিউর রহমান আকন্দ টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার

সকল