২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীরা ছাড় পাবে না : অর্থমন্ত্রী

অংশীজনদের সাথে অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠক
-

যারা পুঁজিবাজারে দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে তারা ছাড় পাবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে পুঁজিবাজারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। এই বাজারে আমরা শতভাগ আস্থা অর্জন করতে চাই। পুঁজিবাজারে যিনি অপরাধ করবেন, তিনি যেই হোন না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন, আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করব।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময়’ সভায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো: মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেছেন, পুঁজিবাজারে অনেক করসুবিধা দেয়া হয়েছে। আরো করসুবিধা দেয়া হবে।
আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাজার অর্থনীতির একটি অন্যতম মৌলিক এলাকা। প্রধানমন্ত্রীও সব সময় পুঁজিবাজার উন্নয়নের কথা বলেন। মধ্য, উচ্চ থেকে সাধারণ প্রায় সব শ্রেণীর মানুষই পুঁজিবাজারে জড়িত। এই বাজারে আরো কিছু কাজ করতে হবে। আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছে গেছি যে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সব সংস্থাও একমত পোষণ করেছে। আপনারা সবাই জানেন আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। আমরা বেশি কিছু আশা করি না। আমাদের অর্থনীতি যতটা গতিশীল, আমাদের পুঁজিবাজারকে ততটা গতিশীল হিসেবে দেখতে চাই। এই বাজারে যে অবিশ্বাস আছে কয়েকটি কারণে, এগুলো দূর করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে পুঁজিবাজারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই বাজারে আমরা শতভাগ আস্থা অর্জন করতে চাই। এখন থেকে আর কেউ অপবাদ দিতে পারবেন না যে, আমরা ন্যায়বিচার করি না। অথবা আমরা কারোর প্রতি দুর্বল। পুঁজিবাজারে যিনি অপরাধ করবেন, তিনি যেই হোন না কেন! যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন আইন অনুযায়ী তার বিচার করা হবে।
সরকারি শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো ভালো সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে। পুঁজিবাজারের মূল্য যাতে যথাযথ হয় সেই কাজও করা হবে। এ লক্ষ্যে বিশেষ কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তারা ঘুরে ঘুরে এসব দেখবে।
মন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের শেয়ার যেন যথাযথ দামে আসে এটা নিশ্চিত করব। পুঁজিবাজারের যেসব চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো আমরা দূর করব। পুঁজিবাজারের সক্ষমতা ফেরাব। যাতে করে পুঁজিবাজারটা যেন টেকসই হয়। বাজারটি যেন একটা ভালো অবস্থানে আসতে পারে। যারা লাফিয়ে লাফিয়ে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে তারা ছাড় পাবে না।
এ দিকে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক ট্যাক্স ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো করসুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারের এখন যে অবস্থা রয়েছে, এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। এটা নিশ্চয় উন্নতি করতে হবে। অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি এখানে বলেছি, বর্তমানে আমরা যে ট্যাক্স-সুবিধা দিয়েছি, যথেষ্ট। যেমন শেয়ার বিক্রি করার পর যে ক্যাপিটাল গেইন (লাভ) হয়, ১০ টাকার শেয়ার কেউ ২০ টাকা দিয়ে কেনে, সে শেয়ার ৩০ টাকা বিক্রি করে। সেই হিসাবে এক হাজার শেয়ার বিক্রি করলে ৩০ হাজার টাকা গেইন হয়। এই টাকার ওপর কোনো ট্যাক্স নেই। আরো অনেক কিছু আছে, যেসব সুবিধা আমরা দিয়ে রেখেছি। যদি প্রয়োজন হয়, এর চেয়ে বেশি ট্যাক্স-সুবিধা দেবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘সভায় দু-একটি বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছিল যে, বিদেশী যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তারা হয়তো চলে যাবে। আমি বলেছি, তারা কোনোভাবেই চলে যাবে না। প্রয়োজন হলে মধ্যস্থতা করে আমরা তাদেরকে রাখব।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এসব ক্ষেত্রে কিছু আইনগত বাধা আছে।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে মির্জ্জা আজিজের ৪ প্রস্তাব : এ দিকে ব্যাংকিং খাতে বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা দূর করাসহ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে চার প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
সভা থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। মির্জ্জা আজিজ বলেন, পুঁজিবাজারে দেশী-বিদেশী ভালো কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। একইসাথে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের যে অভাব রয়েছে, তা দূর করতে হবে। সমন্বয়ের অভাবের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে যেমন বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব রয়েছে এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। এই কারণেও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আজিজ বলেন, ঢালাওভাবে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া ঠিক না। কারণ আইপিও অনুমোদনের সময়ে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বাস্তব চিত্র না দেখিয়ে একটি ‘রোজি পিকচার’ দেয়া হয়। যার ফলে লেনদেনের প্রথমদিকে দাম বাড়লেও কিছুদিন পর দাম কমে যায়। এ ছাড়াও ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছেন বলে জানান মির্জ্জা আজিজ। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের প্রভাব পড়েছে।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement