২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ছাত্রদলের কাউন্সিল

ছাত্রনেতাদের দফায় দফায় বৈঠক

-

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নিয়ে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পর করণীয় ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। কেননা সম্মেলনের প্রার্থী ও কাউন্সিলররা এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। অবশ্য আবার কাউন্সিল কবে হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আদালতের বিষয়টি সুরাহা হলেই কাউন্সিলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে কাউন্সিলের বিষয়ে ছাত্রদলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দিকে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এবং কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার)। সারা দেশের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি ও ছাত্রদলের সবাই অপেক্ষা করছিলেন দীর্ঘ ২৭ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে দলের কমিটি গঠিত হবে। এবার সম্মেলনে সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু কাউন্সিল হওয়ার এক দিন আগে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়ে ছাত্রদলে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরা অবাক হয়ে পড়েন। স্থগিতাদেশের পর ছাত্রদলের নেতারা এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। যদিও ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে বিএনপির ‘হস্তক্ষেপ’কে দায়ী করে আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা আমানউল্লাহ আমান। কিন্তু আদালতের হঠাৎ আদেশে প্রার্থী ও ভোটাররা চিন্তিত। তারা মনে করছেন আদালতের আদেশের পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে।
ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংগঠনের সাবেক নেতা আমান গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। একই সাথে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে জবাব দেয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। বিএনপির মহাসচিবসহ ১০ জন বিএনপি নেতাকে জবাব দিতে বলা হয়। আদালতের এহেন আদেশের পর ছাত্রদলের সম্মেলনের কার্যক্রম প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে থেমে যায়। গত শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে সবার অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। ছাত্রদলের কাউন্সিল ইস্যুতে শুক্রবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে দলের আইনজীবী ও সম্মেলনের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের বৈঠক হয়।
কাউন্সিলের জন্য এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছাত্রদলের প্রার্থী ও ভোটাররা। সভাপতি পদে সর্বাধিক আলোচিত প্রার্থী হাফিজুর রহমান, ফজলুরর রহমান খোকন ও সাজিদ হাসান বাবু বলেন, আমরা আশাবাদী ছিলাম যে, দীর্ঘ দিন পর হলেও ছাত্র রাজনীতিতে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছিল। ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিক তৈরি হবে। কিন্তু সরকার আদালতকে ব্যবহারের মাধ্যমে চক্রান্ত করছে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান, শাহনেওয়াজ, জাকিরুল ইসলাম জাকির ও তানজিল হাসানসহ কয়েকজন বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে। ছাত্রদলের নির্বাচনটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হলে অন্য ছাত্র সংগঠনেও এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরকার অবৈধভাবে আদালতের আশ্রয় নিয়ে কাউন্সিলে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত ও অবাক। তারা এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানান।
ছাত্রদল সম্মেলন পরিচালনায় গঠিত আপিল কমিটির প্রধান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, স্থগিতাদেশের বিষয়টি ফয়সালা হওয়ার পর ছাত্রদলের সম্মেলন হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, এখনো আদালতে জবাব দেয়ার সময় আছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে জবাব দিতে না পারলে আবারো সময় চাওয়া হতে পারে।
এ দিকে গতকাল ছাত্রদলের সম্মেলন ইস্যুতে সংগঠনের সাবেক নেতারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন নেতা আলাপকালে জানান, বৈঠকে আইনগত দিকসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আরো বৈঠক করা হবে। তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের আদেশের মাধ্যমে সরকার আমাদের একটি চক্রান্তে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা আইনজীবীদের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা সব কিছু বিশ্লেষণ করে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন। গতকালের বৈঠকে আইনগত দিকসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আইনজীবীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবো।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল