২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন

শেষ দিনে ৯ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা : লাঙ্গল ও নৌকার আচরণবিধি লঙ্ঘন

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন জিএম কাদের হনয়া দিগন্ত -

রংপুর-৩ সদর আসনের উপনির্বাচনে লড়তে জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদের পুত্র সাদ ও ভাতিজা আসিফ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থীসহ ৯জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় লাঙ্গল ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিশাল শোডাউন নিয়ে খোদ নির্বাচন অফিসের ভেতরেই মিছিল করেন। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচন অফিসে গেলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাননি। অন্য দিকে দলীয় কোন্দলের কারণে স্থানীয় কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না বিএনপি প্রার্থীর সাথে। সব মিলে মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছিল রংপুর।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন জানান, ১২জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এরমধ্যে ৯জন জমা দিয়েছেন। তারা হলেনÑ জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা, এনপিপির শফিউল আলম, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, গণফ্রন্টের কাজী মো: শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক।
আচরণবিধি লঙ্ঘন : সকাল থেকেই নির্বাচন অফিসের আশপাশে ভিড় জমান জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। বেলা পৌনে ৩টায় বিশাল শোডাউন নিয়ে সাদ এরশাদ নির্বাচন অফিসে আসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি অফিসে প্রবেশ করলেও নির্বাচন কর্মকর্তার রুমে যাননি। নিচের একটি রুমে অপেক্ষা করেন। সাদ এরশাদ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতি, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, শাফিউল ইসলাম শাফী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনশি আব্দুল বারী, জেলা ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক আশরাফুল হক জবা, যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান মজিদ বিদ্যুৎ, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম ও স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি শামীম সিদ্দিকিকে নিয়ে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার বাবা এরশাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই তার ব্রত। মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে ফিরে যাওয়ার সময় আবারো সেøাগান দেন নেতাকর্মীরা।
অন্য দিকে, বেলা পৌনে ৪টায় বিশাল শোডাউন নিয়ে নির্বাচন অফিসের নিচ তলায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। এ সময় নৌকা নৌকা সেøাগানে পুরো নির্বাচন অফিস মুখরিত হয়ে উঠে। পরে তিনি জেলা সভাপতি মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সেক্রেটারি তুষারকান্তি মণ্ডলসহ আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। নিচে নেমে এসে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব আমরা। অন্য একটি পক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এখানে মহাজোটের প্রার্থী হবে। কথাটি ঠিক নয়। নৌকা থাকবে এবং বিজয়ী হবে।
নেতাকর্মী ছিল না রিটা রহমানের পাশে : বিএনপি মনোনিত প্রার্থী রিটা রহমান দলীয় কোন্দলের কবলে পড়ে যান রংপুর এসেই। ফলে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো স্তরের নেতাকর্মী তার মনোনয়ন জমার সময় উপস্থিত ছিলেন না। অনেকটা একাকী অবস্থায় তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রংপুরে এলেও তিনিও তার সাথে যাননি। তিনি নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মনোনয়ন দাখিল করে এসে তিনি বলেন, দলীয় কোন্দল ঠিক হয়ে যাবে। আচরণবিধি মেনে আমি মনোনয়ন দিয়েছি। বিজয় আমাদের হবেই।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন আমি সাদ এরশাদের সাথে এলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাইনি। এখানে আমি মহাসচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।
এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, আচরণবিধি লঙঘনের ব্যপারে আমরা প্রার্থীদের কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছি। মাইকিং চলছে। ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
গত ১৪ জুলাই রংপুর সদর-৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ অক্টোবর এখানে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement