২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কালশী ফ্লাইওভার ও সড়কে জ্বালানি ব্যয় মাসে ১০ লাখ টাকা

এক লাফে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি;তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে পরামর্শক খাতে খরচ; কিলো মিটারে ফুটপাথ নির্মাণব্যয় ৩.৪২ কোটি টাকা
-

ব্যয় বৃদ্ধি উন্নয়ন প্রকল্পে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কোনোভাবে প্রকল্প একনেক থেকে পাস করাতে পারলেই কিছু নতুন অঙ্গ সংযোজনের বাহানা দিয়েই ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। অনুমোদিত ও নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যে স্থির থাকতে পারছে না দেশের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প। নির্মাণসামগ্রীর দর বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে রাজধানীর ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় এক লাফে ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি তিন গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে পরামর্শক খাতে খরচ। প্রতি মাসে জালানি ব্যয় ১০ লাখ টাকা। আর প্রতি কিলোমিটার ফুটপাথের নির্মাণখরচ ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব আগামী মঙ্গলবার একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন, ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রকল্প মেয়াদেই নতুন অঙ্গ সংযোজনের কারণে এখন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৬১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একনেক থেকে ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে দুই ক্যালেন্ডার বছর মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। প্রকল্পের আওতায় কালশী রাস্তাটি ৩.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩১.৫০ মিটার প্রস্থে উন্নয়ন এবং কালশী ইন্টারসেকশনে ৮৪৪ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের সংস্থান ছিল। এখন পরামর্শকের ড্রইং ও ডিজাইন অনুযায়ী নতুন করে অঙ্গ সংযোজন করা হয়েছে। নতুন করে আকার বৃদ্ধির কারণে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এ ব্যয় ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, প্রকল্পের কাজের জন্য মোট ১৩ দশমিক ২৭৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার পাশাপাশি সেখানে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এখানে প্রতি একরে খরচ হবে ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ করা হবে। প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে এই ব্যয় দ্বিগুণ করে ২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে প্রতি কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণে খরচ হবে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা প্রথমে ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ধরে অনুমোদন নেয়া হয়। দুই বছরের এই প্রকল্পের এখন ব্যয় ও সময় বাড়ানো হচ্ছে। সাড়ে তিন বছর বা ৪০ মাসে প্রকল্পে জ্বালানি খাতে (গ্যাস, পেট্রল ও লুব্রিকেন্ট) ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। প্রতি মাসে জ্বালানি খাতে খরচ হবে ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি টাকা। এখন সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। ফলে প্রতি মাসে পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
জানা গেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় সুপারিশ করা হয়েছিল সর্বশেষ রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রস্তাবিত ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে। যেসব ভৌত কাজের টেন্ডার করা হয়নি বা কার্যাদেশ দেয়া হয়নি সেসব ভৌত কাজ পিডব্লিউটি এবং সওজের ২০১৮ সালের শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলন করা প্রয়োজন। ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ইন্টারসেকশনে প্রবেশের আগে জায়গার স্বল্পতার কারণে বাস-বে না করে বাস স্টপেজের ব্যবস্থা রাখা। কালশী ইন্টারসেকশন থেকে শতবর্ষ চত্বর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচে স্থানীয় জনসাধারণের পারাপারের জন্য জেব্রাক্রসিংয়ের ব্যবস্থা রাখা। আর মনিটরিংয়ের জন্য সিসি টিভি কন্ট্রোলরুম নির্মাণ করা। এ ছাড়া নলেজিয়াম স্কুলের কাছে ফুটওভার ব্রিজ করা।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রকল্পের খাতওয়ারি ব্যয় অনেক বেশি। এসব ব্যয় সঠিকভাবে নিরূপণ করা হলে প্রকল্পের ব্যয় অনেক কমে যেত। আর বাড়তি অর্থ দিয়ে নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া যেত। প্রকল্প অনুমোদনের সময় একটি শিডিউল রেট দিয়ে করা হয়। এরপরই যুক্তি দেয়া হয় নতুন রেট শিডিউল ও দর বৃদ্ধি। এসব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কখনোই নির্ধারিত খরচে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল