২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব ছাড়া স্বদেশে ফিরতে চান না রোহিঙ্গারা

নয়াপাড়া শালবাগান ক্যাম্পে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রাখা ঘর : নয়া দিগন্ত -

জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) সংস্থার সাক্ষাৎকার দিতে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন আট-দশ জন রোহিঙ্গা। সবাই জানিয়েছেন, এখনই তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান না। ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য ৩ হাজার ৫৪০জন রোহিঙ্গাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা মিয়ানমারে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। জোর করে কাউকে পাঠানো হবে না বলে কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন। এজন্য কাজ করছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়। এ জন্য টেকনাফের কেরানতলীতে একটি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় আরেকটি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। এ দিকে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ মিয়ানমারে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়ে আসার পর আবু সিদ্দিক নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ‘যত দিন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হবে, তত দিন আমরা মিয়ানমারে যাব না। আমাদের জায়গা-সম্পত্তি যা ছিল তা ফিরিয়ে দিলে তবেই আমরা যাব। ওখানে এখনো অত্যাচার চলছে। মিয়ানমারে আমাদের ওপর নির্যাতনের বিচার করতে হবে, আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরপরই আমরা সেখানে ফেরত যাব। এই কথাই আমরা সাক্ষাৎকারে বলেছি।’
একই ক্যাম্পের আরেকজন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আমরা অনেক দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করে বাংলাদেশে এসেছি। আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে। মা-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জমি-জিরাত কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই অত্যাচার, নির্যাতেনের বিচার করতে হবে। আমাদের সবকিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। তাহলে আমরা যাব, অন্যথায় যাব না।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা এক রোহিঙ্গা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘সকালে ইউএনএইচসিআর ও ক্যাম্প ইনচার্জের প্রতিনিধিরা ঘরে এসেছেন। তারা বলেছেন, তালিকায় আমার পরিবারের নাম রয়েছে, সাক্ষাৎকার দিতে বিকেলে ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বলেছেন। তবে আমরা মিয়ানমারে ফেরত যাব না। যে দেশ থেকে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে এসেছি, সেখানে ফিরে যেতে চাই না। নির্যাতনের বিচার পেলেই কেবল ফিরে যাব।’
নয়াপাড়া শালবাগান ক্যাম্পের (নং-২৬) রোহিঙ্গা হেড মাঝি বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের এক প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শিবিরে পরিদর্শনে এসেছিলেন। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়। আমরা চারটি শর্ত ছুড়ে দিয়েছিলাম। এ ছাড়া আমাদের সাথে ডায়ালগ করার কথা রয়েছে। এসব বিষয় সম্পন্ন না হলে রোহিঙ্গারা ফিরবে না বলেও জানান তিনি।
একাধিক রোহিঙ্গা নেতা ও সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, তাদের পক্ষ থেকে পুনরায় তাদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে-জমি ফিরিয়ে দেয়া, মিয়ানমারে আটককৃতদের মুক্তি, হত্যা, গণধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের বিচারের দাবি রয়েছে। এসব দাবি পূরণ হলে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা।
এ ছাড়া ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এসব লিফলেট বার্মিজ ভাষায় লেখা রয়েছে। লিফলেটগুলোতে প্রত্যাবাসনের পর এনভিসি কার্ডের মাধ্যমে ছয় মাস পরে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের কথা বলা রয়েছে বলে জানান রোহিঙ্গারা।
টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, আজ সকাল থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে মতামত জানানোর কথা ছিল তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি তাদের কেউ। পরে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের সাক্ষাৎকার দিতে আসার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। বেলা দেড়টার পর আট থেকে দশ জন সাক্ষাৎকার দিতে আসেন।
তিনি আরো জানান, যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের সবাই মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এ দিকে সাক্ষাৎকার ঘিরে শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
২০১৭ সালে রাখাইনে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে : দুদু

সকল