উপকূল সুরক্ষায় সুপার ডাইক নির্মাণের উদ্যোগ ব্যয় হবে ৮০ হাজার কোটি টাকা

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা। সে কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফপুঞ্জ গলছে আর সেই সাথে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চতা। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে প্রকৃতির আচরণ রুক্ষ থেকে রুক্ষতর হয়ে উঠছে। এ কারণে প্রতি বছর উপকূলীয় অঞ্চলের ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ুজনিত এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
তারই আলোকে বঙ্গোপসাগর উপকূল কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে জেলার মিরসরাই এবং ফেনীর রেগুলেটর থেকে নোয়াখালীর রহমতখালী রেগুলেটর ও পুরো হাতিয়াসহ ৬৪২ কিলোমিটার উপকূল সুরক্ষায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার উঁচু করে সুপার ডাইক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৬ কোট ৮৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া নোয়াখালীর রহমতখালী রেগুলেটর থেকে ফেনী রেগুলেটর পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার ও পুরো হাতিয়া উপকূলের ৮৬ কিলোমিটারসহ ২১২ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।
সুপার ডাইক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী-ফেনীর উপকূলীয় এলাকার সার্বিক মানোন্নয়নে সমুদ্র উপকূল প্রতিরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণ শীর্ষক দু’টি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে (নকশা) প্রধান করে গত মে মাসের শেষ দিকে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রের জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রাকৃতিক কারণে বর্তমানে বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলা হয়। এ কারণে বর্তমান সরকার, জলবায়ু পরিবতর্নের ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ২০০৯ (বিসিসিএসএপি-২০০৯) চূড়ান্ত করা হয়; যা উন্নয়শীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এ ধরনের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করা হয়।
সূত্র জানায়, সুপার ডাইক নির্মাণের উদ্দেশ্য হলোÑ আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা। এই পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাউবো সূত্র থেকে জানা গেছে, সুপার ডাইক নির্মাণ হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার উঁচু করে এবং সুপার ডাইকের ওপর দুই লেনের (মেটোরেভল পেভমেন্ট) সড়ক এবং তীরের দুই দিকে ঢাল সুরক্ষায় নেয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের মধ্যে ১৯১ কিলোমিটার সন্দ্বীপে, ৬৩ কিলোমিটার কুতুবদিয়ায়, ধলঘাটায় ৩৮ কিলোমিটার এবং মহেশখালীতে ৯০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণ করা হবে।
তা ছাড়া প্রকল্পটির মধ্যে রেগুলেটর ৩০টি, কানেকটিং ব্রিজ সাতটি (সাঙ্গু নদীতে ৬৮০ মিটার, জলকদর খালে ২৩২ মিটার, ছনুয়া খালে ১২০ মিটার, ঈদগাহ খালে ১৪০ মিটার, বাকখালী খালে ২৫০ মিটার, মাতামুহুরী নদীতে ২৩০ মিটার ও বারুয়াখালী খালে নির্মিত হবে ১৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ) অপর দিকে রহমতখালীর রেগুলেটর থেকে ফেনী রেগুরেটর পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের মধ্যে ৭০টি রেগুলেটর, ১২টি ক্লোজার, একটি ব্রিজ এবং হাতিয়ার ৮৬৯ কিলোমিটার সুপার ডাইক (ঢাল) নির্মাণকাজ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির জানান, নির্দেশনার আলোকে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। একই ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহির আহমেদ সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য ডিপিপি তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ৪৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য ডিপিপি তৈরির কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে বলে চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশারফ নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে নোয়াখালী ফেনী হাতিয়াসহ ৬১২ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) মোতাহার হোসেন প্রকল্প দু’টির ডিপিপি তৈরির কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন।