২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আ’লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান বাংলাদেশকে রাজনীতিশূন্য করছে সরকার ফখরুল

গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো: আবদুল করিমের বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠান হনয়া দিগন্ত -

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করছে। যাতে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করতে না পারে তার জন্য তারা একে একে সংবিধানে পরিবর্তন নিয়ে আসছে এবং সেই পরিবর্তনগুলো করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে শূন্য করে দেয়ার চক্রান্ত শুরু করেছে সরকার।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মো: আব্দুল করিমের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপিতে যোগদানের জন্য আব্দুল করিমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব। গাজীপুর মহানগর সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও কোতোয়ালি থানার সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন ভূঁইয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সিরাজুল হক মোল্লা ও মাহবুব আলম শুক্কুর প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগরের বসির উদ্দিন বাচ্চু, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, জিয়াউল হাসান স্বপন, জাবেদ আহমেদ সুমন, আখতার হোসেন, বসির উদ্দিন, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আবদুর রহিম খান কালা, সাইফুল ইসলাম টুটুল, আজিজুল হক রাজু মাস্টার, মনিরুল ইসলাম বাবুল, ফারুক হোসেন খান, আবদুল হালিম, হারুন-অর রশিদ, তাইজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ দেশে এক দল থাকবে, আর কোনো দল থাকবে না। সেই ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, বর্তমান এই আওয়ামী লীগ আবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে এবং এ জন্য দীর্ঘ দিন ধরে তারা পরিকল্পনা করছে।
১৯৭২-৭৫ সালকে আওয়ামী লীগের ‘দুঃশাসনের সময়’ উল্লেখ করে ওই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যার নারকীয় চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অনেকেই ভুলে গেছি- সেই সময়ে বিরোধী দল করত বলে বাবাকে দিয়ে এক তরুণ যুবকের গলা কেটে সেই মাথা নিয়ে তারা ফুটবল খেলা করেছে। এটা ইতিহাস। আজকে একইভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে সরকার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশের কোথাও সুশাসন নেই। আছে দুঃশাসন। দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই, মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, মহিলা-শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে এবং বিনাবিচারে নিরপরাধ লোককে আটক করে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর।
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু তাই নয়, এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো পুরোপুরিভাবে দেউলিয়া করে ফেলা হচ্ছে। সর্বশেষ যেটা হয়েছেÑ সেটা, কোরবানির চামড়া নিয়ে। এই কোরবানি চামড়া বিক্রি করে আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, মাদরাসা-এতিমখানাগুলো তাদের ভরণপোষণের জন্য অর্থ উপার্জন করত। সেই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আজকে তাদের কারণেই, তাদের সমস্ত দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কারণেই সিন্ডিকেট তৈরি করে এবং একই সাথে সরকারের কোনো নীতি না থাকার কারণে চামড়া শিল্প ধ্বংসের উপক্রম হয়ে পড়েছে।
গাজীপুরের নেতাকর্মীদের সংগঠন শক্তিশালীর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংগঠনের বিকল্প কিছু নেই। সংগঠন থাকলেই আপনি আন্দোলনে সফল হতে পারবেন, সংগঠন থাকলে আপনি নির্বাচনে সফল হতে পারবেন। এ বিষয়টা আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মনে রাখতে হবে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কারÑ সবার আগে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। উনি মুক্ত না হলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা যাবে না। আমরা অবিলম্বে এই দখলদার সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো দিনই রাজনৈতিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না।
বিএনপিতে যোগদানকারী গাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মো: আব্দুল করীম বলেন, আমরা অবশ্যই দেশকে ভালোবাসি। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে, দেশের আইনশৃঙ্খলা সুন্দর থাকবে, ভালো থাকবে, একজন মানুষ স্বাধীন হিসেবে দেশে বসবাস করবেÑ এটাই যদি আপনারা না পারেন, প্রতিবাদ যদি আমরা না করতে না পারি তাহলে আমরা কিসের মানুষ হলাম?
তিনি বলেন, সেই কারণে এ দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য, বিগত দিনে যে আইনশৃঙ্খলা ছিল, বিগত দিনে যে গণতন্ত্র ছিল সেই গণতন্ত্রকে আবার পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্যই আজকে আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি। আপনারা এই দুঃসময়ে দলকে যে ধরে রেখেছেন তা কিসের জন্য? তা মানুষকে বাঁচানোর জন্য, দেশকে বাঁচানোর জন্য। এ জন্য আমার পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement