২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষকদের ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে সরকার সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংক দেবে অর্থ

-

চলতি অর্থবছরে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ লক্ষ্যমাত্রা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০.৬৬ শতাংশ বেশি। নতুন অর্থবছরের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণার সময় এ লক্ষ্যমাত্রার কথা জানানো হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান ও কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর বলেন, কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত অর্থবছরে মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের (আইএমএফ) মাধ্যমে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার পরিমাণ আট হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। তবে আইএমএফ থেকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা আরো কমে আসবে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে যদি প্রশাসনের কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানান তাহলে অবশ্যই আমরা তা বিবেচনায় নেবো। এ ছাড়াও কেউ যদি ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে আসেন তাহলে ব্যাংকগুলোরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে আসা উচিত।
যে ক’টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করেনি তাদের বিরদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে কিছু দুর্বল ব্যাংক ছাড়া সবাই কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। তবে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ ছাড়াও মধুমতি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তারপরেও কেন তারা ঋণ বিতরণ করতে পারেনি তা সঠিকভাবে বিচার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে মোট ৩৮ হাজার ৮৩ হাজার ৪২৪ জন কৃষক কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৬ লাখ এক হাজার ৮৫৬ জন নারী প্রায় সাত হাজার ১৯০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
ওই অর্থবছরে ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৩২২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃৃতি অনগ্রসর এলাকার ৯ হাজার ৯৫০ জন কৃষক প্রায় ৩১ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কৃষকদের কাছে কৃষিঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছু সময়োপযোগী বিষয় সংযোজিত হয়েছে।
এবারের নীতিমালার উল্লেখযোগ্য নতুন সংযোজিত বিষয়গুলো হচ্ছেÑ এমএফআই লিংকেজের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব শাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির নির্দেশনা প্রদান; কাজুবাদাম ও রাম্বুটান চাষে ঋণ প্রদান; কচুরিপানার ডাবল বেড পদ্ধতিতে আলু চাষে ঋণ প্রদান; এক টাকা থেকে যেকোনো অঙ্কের সব বকেয়া শস্য ও ফসল ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হবে; কিন্তু নতুন মঞ্জুরি বা নবায়নের জন্য ২.৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত শস্য ও ফসল ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না; ঋণ পরিশোধের স্বাভাবিক সময়সীমা (বীজ উৎপাদন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের জন্য) সংযোজন; শস্য/ফসল খাতে ঋণ বিতরণের জন্য একর প্রতি ঋণসীমা যৌক্তিক পরিমাণ বৃদ্ধিকরণ; গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল ও ভেড়া পালনের জন্য ঋণ নিয়মাচার সংযোজন; বাণিজ্যিকভাবে রেশম উৎপাদনের জন্য ঋণ নিয়মাচার সংযোজন; এটুআই গৃহীত কৃষি ও পল্লী ঋণ সহজীকরণ সিস্টেমটির পাইলটিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

 


আরো সংবাদ



premium cement