১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাড্ডায় মহিলাকে পিটিয়ে হত্যা

মা ড্রেস আনতে গেছে বলে অপেক্ষায় ছোট্ট তুবা

গ্রেফতারকৃতরা ৪ দিনের রিমান্ডে
-

ছোট্ট মেয়ে তাসনিম তুবা। বয়স সবে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার বছর। আড়াই বছর আগে তুবার বাবার সাথে মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আপন বলতে তুবা শুধু মাকেই চেনে। প্রতিদিনের মতোই মেয়েকে আদর করে সে দিনও বাসার বাইরে গিয়েছিলেন তুবার মা তাসলিমা বেগম রেণু। বের হওয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন তুবার জন্য নতুন ড্রেস আনবেন; কিন্তু গত চার দিনেও নতুন জামা নিয়ে মা আসেনি। অপেক্ষা আর ফুরায় না ছোট্ট তুবার। আর কখনো আসবে না তার মা। কিন্তু কেউ তুবাকে জিজ্ঞাসা করলেই বলছে, মা নতুন ড্রেস আনতে গেছে। এ বয়সেই তুবাকে মায়ের আদর-স্নেহ বঞ্চিত হতে হবে, কে জানত?
মাঝে মধ্যে মনে পড়লে মাকে খুঁজে ফিরে অবুঝ শিশুটি। কারণ সে এখনো জানেও না, পৃথিবীতে তাকে আগলে রাখার কেউ রইল না আর। তুবার জন্মের দেড় বছর পরেই পারিবারিক কলহের নিষ্ঠুরতায় বাবার প্রস্থানের পর শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল মমতাময়ী ওই মা, এক গুজবের নামে দানবের হাতে শিকার হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেলেন তিনিও। পুলিশ এ ঘটনায় গতকাল এ খবর লেখা পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে গত রোববার রাতে গ্রেফতার তিন যুবকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিরা হলোÑ জাফর, শাহীন ও বাপ্পী। গতকাল সোমবার আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্য দিকে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন আসামিদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত রোববার রাতে মোবাইল ফোনের ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ দিকে তুবার খালা কুসুম বেগম বলেন, তুবা মাঝে-মধ্যেই তার মাকে খোঁজে। তখন আমরা মা চকোলেট আনতে গেছে বলে সান্ত্বনা দিই। নতুন জামা আনতে গেছে বলে সান্ত্বনা দিই। সে তো ছোট মানুষ, কিছু বোঝে নাÑ মা একটু পর আসবে বলে অন্য দিকে মনযোগ ফিরিয়ে দিই। তারপর সে আবার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তার মা তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এই ধাক্কা সে সইতে পারবে না। তাই মিথ্যা কথা বলে সময় পার করছি।
তুবার বড় খালা নূরজাহান বেগম বলেন, তুবা জন্মের পর আমাদের বাসাতেই থাকত। ও তো কিছু বোঝে না, তাই মাঝে-মধ্যে মায়ের কথা বলে, এমনিতে ভালোই আছে। তবে যে মা একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, সেই মেয়ের আগামীটা ঘোর অন্ধকারই হয়ে রইল। এর বিচার কি দেশে হবে!
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে ওই নারীকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গণপিটুনির পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহতের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাগনে ও বোন রেহানা। তারা জানান, নিহতের নাম তাসলিমা বেগম রেণু। তার ১১ বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। আড়াই বছর আগে স্বামী তসলিম উদ্দিনের সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকায় একটি বাড়িতে থাকতেন তিনি।
নিহতের ভাগনে নাসির উদ্দিন বলেন, রেণু মানসিক রোগে ভুগছিলেন। চার বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে ঘুরছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বাড্ডার ওই স্কুলটিতে যান। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নাসির উদ্দিন।  


আরো সংবাদ



premium cement