২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন খারিজ বিভিন্ন স্থানে

-

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা নালিশ করার অভিযোগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেত্রী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় আদালত মামলা গ্রহণ করলেও অনেক স্থানে তা খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
আদালত প্রতিবেদক জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের দুই মামলা খারিজ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন একটি মামলা করেন। মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো: নোমানের আদালতে আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল অপর মামলাটি করেন। আদালত বাদিদ্বয়ের জবানবন্দী রেকর্ড করে মামলা দু’টি খারিজ করে দেন।
আইনগত বাঁধা থাকার কারণে ব্যারিস্টার সুমনের মামলাটি আদালত খারিজ করেছেন বলে জানান তার আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক। আর বাদি সরকারি প্রতিনিধি না হওয়ায় আইনজীবী ইব্রাহিম খলিলের মামলাটি খারিজ করা হয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী রাশেদা আক্তার।
দুই মামলায় অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জুলাই সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বলেন। এ সময় প্রিয়া সাহা তিন কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু গুম এবং তার নিজের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও জমি দখলের অভিযোগ করেন। মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করেছে, সব সময় তারা রাজনৈতিক শেল্টার পাচ্ছে বলেও ট্রাম্পকে বলেন প্রিয়া সাহা। আসামির এ ধরনের অভিযোগ শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এর মাধ্যমে তিনি দেশের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ সৃষ্টি করেন, যা দেশকে অস্থিতিশীল ও বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার পাঁয়তারা করেছে বলে খারিজ করা মামলা দু’টিতে বলা হয়। এ ছাড়া ট্রাম্পের কাছে দেয়া মিথ্যা বক্তব্য সম্পূর্ণ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে আসামি স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয় মামলা দু’টিতে।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলা করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার সকালে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি কোতোয়ালি আদালতে এ অভিযোগ করেন যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা কামাল। পরে বিচারক আবেদনটি খারিজের আদেশ দেন।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, প্রিয়া সাহা দেশদ্রোহী, অবজ্ঞা সৃষ্টিকারী ও নির্বাচিত সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন।
মামলাটির আইনজীবী সৈয়দ কবীর হোসেন জনী জানান, সকালে আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি কোতোয়ালি আদালতের বিচারক আবেদনটি খারিজের আদেশ দেন।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, প্রিয়া সাহার নামে ঝালকাঠিতে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন যুবলীগ নেতা ছবির হোসেন। বিচারক এ এইচ এম ইমরানুর রহমান বাদি ও আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি। পরে বাদির আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদির আইনজীবীরা।
বাদির আইনজীবী রুহুল আমীন রিজভী বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই প্রিয়া সাহা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ করেছে। এতে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আদালত আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
নাটোর সংবাদদাতা জানান, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন নাটোরের এক গণমাধ্যমকর্মী। ঢাকার একটি সংবাদপত্রের নাটোর প্রতিনিধি নাসিম উদ্দিন নাসিম বাদি হয়ে গতকাল দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। এ সময় বিচারক মামলার শুনানি শেষে নাটোর সদর থানার ওসিকে তদন্ত করে আগামী ৬ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট ও দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় প্রিয়া সাহাসহ তার স্বামী মলয় সাহা, দুই মেয়ে ও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ করায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছে।
গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মো: আসাদ উল্লাহ নামে একজন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার বাদি মো: আসাদ উল্লাহ্ জানান, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য প্রিয়া সাহা মিথ্যাচার করেছেন। এটি আমাকে আহত করেছে। তাই আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
খুলনা ব্যুরো জানায়, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে খুলনায় দু’টি মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়েছেন দুইজন। তারা হলেনÑ খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কামরুজ্জামান জামাল ও অপরজন হলেনÑ মদন কুমার সাহা।
কামরুজ্জামান জামাল বলেন, গতকাল তিনি খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা দায়েরের আর্জি দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। পরবর্তী তারিখ এখনো পাওয়া যায়নি।
অপর দিকে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটির সভায় প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
প্রিয়া সাহার সাথে কেউ জড়িত আছে কি না ঘতিয়ে দেখা হবে : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা যেসব তথ্য দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা। প্রিয়া সাহা তার কোনো ব্যক্তিগত ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য এসব বলেছেন। এ বিষয়ে কোনো গোষ্ঠী বা অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
গতকাল বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সহকারী জজদের ৩৯তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী মনে করেন, প্রিয়া সাহাকে এত গুরুত্ব না দিয়ে শুধু সত্যটাকে তুলে ধরে বাকিটুকু ইগনোর করলেই ভালো হয়। তিনি বলেন, প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেছে এটা বোধ হয় ঠিক না তবুও স্বাধীন বিচার বিভাগে বিজ্ঞ বিচারকরা যেটা মনে করবেন সেটা করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement