২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জের সীমান্তে বালু পাথরে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি হুমকির মুখে

সুনামগঞ্জে ফসলি জমিতে নেমে আসা বালু ও পাথর : নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় দুই যুগে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বয়ে আসা প্রায় ৪০টি ছড়ার মাধ্যমে বালু,পাথর আসার ফলে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, স্কুলসহ প্রায় ২৩টি নদীর নাব্যতা কমে হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে দিন দিন ওই সব এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ফসলি জমির ওপর নির্ভরশীল কৃষক পরিবারগুলো সারাক্ষণেই রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে। আর বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের আতঙ্কে থাকে পাহাড়ে ও আশপাশে বসবাসকারী পাঁচ শতাধিক পরিবার।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা তাহিরপুর, বিশ্বাম্ভরপুর, দোয়ারা বাজার, ছাতক, ধর্মপাশা, জেলা সদরের ডলুরা, নারায়ণতলা দিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা ছড়া ও বিভিন্ন নদী মাধ্যমে পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা বালু, পাথর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পুকুর ভরাট, স্কুল, ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট করে মরুভূমিতে পরিণত করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। অন্য দিকে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে নদীর ভাঙ্গন বেড়ে যাওয়ায় নদী পাড়ে ঘরবাড়িহারা মানুষগুলো পথে বসেছে। বালুতে ভরে যাওয়া পাহাড়ি নদীগুলোর পানির ধারণ করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় অল্প পানিতেই নদী ভড়ে যাওয়ায় পানি ক্রমাগত ভাটির দিকে নেমে আসায় নিম্নাঞ্চলে বন্যার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
আরো জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার পাঁচশোলা, বিকিবিল, লালকুড়ি, লোভার হাওর ও বিশ্বাম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরসহ জেলার দোয়ারা বাজার উপজেলার খাশিয়ামারা, সোনালি তলা, টিলাগাঁও, মহবতপুর, ছাতক উপজেলার ইছামতি সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন নদী ও হাওরগুলোতে চৈত্র মাসে ১০-১২ হাত পানি থাকত সেখানে বালুর চরে পরিণত হয়ে নদীর নাব্যতা কমে নদীর দিক পরিবর্তন হচ্ছে।
তাহিরপুর সীমান্তের চাঁনপুর গ্রামের আজিজুল, ইসলাম নুরসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা আরো জানা যায়, ২০০৮ সালের ২০ জুলাই মাসে অতি বৃষ্টিতে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে কালো পাহাড় নামক স্থানটির অংশ পাহাড় ধসে ও পাহাড়ি ঢলে চাঁনপুর সীমান্তের ঘরবাড়ি হারায় শত শত পরিবার। প্রাথমিকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় গঠিয়ে ভাঙ্গন ও বালুর নিচে চাপা পড়ছে সীমান্ত স্কুল, মসজিদসহ শত শত ফসলি জমি। পাহাড়ে ও আশপাশে বসবাসকারী পরিবারগুলো বৃষ্টি হলেই থাকে পাহাড় ধসের আতঙ্কে। অথচ, বালু, পাথর সরাতে এর সমাধানে আজ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
শফিকুল, জামাল, সুমনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়Ñ সুনামগঞ্জ জেলা সীমান্তে পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা বালু, পাথরের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়ার কারণে এই সব ছড়া দিয়ে সীমান্তের চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও চোরাচালানিরা স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে কয়লা, চুনাপাথর, গরু আনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনাসহ বিএসএফএর হাতে আটক হয়। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ সারাক্ষণেই আতঙ্কে আছে।
সুনামগঞ্জের রুটিন দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিজিবিসহ সবার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল