১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লক্ষাধিক হজ ভিসা ইস্যু ৬৫ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন

-

চলতি বছরের হজের জন্য এ পর্যন্ত লক্ষাধিক হজ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮৫টি হজ ভিসা ইস্যু হয়েছে। গত কয়েক দিনে প্রতিদিন ৬ হাজারের মতো ভিসা ইস্যু হচ্ছে। ১৭৩টি ফ্লাইটে ৬২ হাজার ৭৪৫ জন সৌদি আরব পৌঁছান। গত মধ্যরাত পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ১০টি ফ্লাইটে প্রায় তিন হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছানোর কথা। ফলে গতকাল রাত পর্যন্ত সর্বমোট ৬৫ হাজারের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
হজ ভিসা ইস্যু কোনো ধরনের জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাড়ি ভাড়াসহ হজযাত্রীর যাবতীয় তথ্য ই-হজ সিস্টেমে আপলোড করে বিমান টিকিটসহ পাসপোর্ট হজ অফিসে জমা দেয়ার পরই হজ অফিস ছাড়পত্র দিলেই অনলাইনেই ভিসা ইস্যু করে দিচ্ছে সৌদি দূতাবাস। এজেন্সিগুলো নিজ নিজ অফিস থেকেই নিজ নিজ হজযাত্রীর ভিসা প্রিন্ট করে নিতে পারছেন।
এই বছরের নিবন্ধিত হজযাত্রীর সকলে হজে গেলে মোট ভিসা ইস্যু করতে হবে এক লাখ ২৬ হাজার ৯২৩টি। চলতি বছর বাংলাদেশী হজযাত্রীর কোটা নির্ধারিত রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার।
এর আগে এজেন্সির বিলম্বিত আবেদন এবং সার্ভার জটিলতার কারণে সময়মতো ভিসা না পাওয়ায় দু’টি এজেন্সির কিছু হজযাত্রীর ফ্লাইট মিস করার ঘটনা ঘটার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় ফ্লাইটের এক সপ্তাহ আগেই ভিসা ইস্যুর জন্য কড়া নির্দেশনা জারি করে। গত মঙ্গলবার জারি করা নির্দেশনায় এই সময়ের মধ্যে ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সৌদি দূতাবাস (গুলশান) এবং হজ অফিসে জানাতে বলা হয়। ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীদের কোনো জরিমানা ছাড়াই বিভিন্ন ফ্লাইটে হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে হজ অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট কার্যক্রম। উদ্বোধনের পর থেকে কোনো ধরনের সঙ্কট, জটিলতা ছাড়াই চলছে বিমানের হজ অপারেশন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, হজ কার্যক্রম সফল করতে বিমান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গত ৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়। শেষ ফ্লাইট আগামী ৫আগস্ট। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ১৭ আগস্ট এবং ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ ফিরতি ফ্লাইট।
বিমানের ফ্লাইট শিডিউলে যাতে কোনো বিপর্যয় না ঘটে তার জন্য এ বছর হজযাত্রীদের নামেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগেই টিকিট ইস্যু করেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা ঘটেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ও এজেন্সিগুলোর প্রতি কড়াকড়ি আরোপ করে বলেছে, ফ্লাইটের এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রমের শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ২০২০ সালের হজ মওসুমের হজযাত্রী প্রেরণে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
তবে এখনো কিছু এজেন্সি সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও তাসরিয়ার অনুমোদন নেয়নি। এরই মধ্যে এজেন্সিগুলোকে ডেকে ধর্ম মন্ত্রণালয় কারণ জেনেছে। সূত্রমতে, এসব এজেন্সি হজযাত্রীদের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সরকারের কাছে আরো ৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার দেয়ার নতুন কোন ঘোষণা দেয়নি। এর আগে দুই দফায় ১০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দেয়া হয়। চলতি বছর ৫৯৮টি এজেন্সি হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট পবিত্র হজ পালিত হবে।
১২ হজযাত্রীর মৃত্যু : সৌদি আরবে এ পর্যন্ত ১২ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১০, মহিলা ২ জন। মক্কায় ৯ জন, মদিনায় ২ ও জেদ্দায় একজন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তিনজন হজযাত্রী মারা যান। তারা হলেন আবু তালেব (৮২)। তার পাসপোর্ট নম্বর ইএ-০৫২৩৩৩৩, গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ার সাহারবিল। তিনি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তাইফুর রহমান ট্রাভেলসের মাধ্যমে গত ১০ জুলাই বিজি-৩৩১৭ ফ্লাইটযোগে সৌদি আরব যান। কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর গ্রামের শফিউজ্জামান (৬০)। তার পাসপোর্ট নম্বর বিএল-০৪৫০৩৭০। তিনি গত ১৭ জুলাই বেসরকারি হাসনাইন অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে বিজি-৩১৩৭ ফ্লাইটযোগে মদিনা যান। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার বড়কান্দি গ্রােেমর আবদুল মান্নান মাল (৭১)। তার পাসপোর্ট নম্বর বিকিউ ০৮৫৭৫৮৪। তিনি গত ১৫ জুলাই সাহারা এভিয়েশনের মাধ্যমে মক্কায় যান। গত বুধবার মক্কায় মারা যান, রাজশাহী জেলার মোসা: কুলসুম বেগম (৬৮)। তার পাসপোর্ট নম্বর : ইঞ ০৩৫৯৯৬৬। তার আগে মঙ্গলবার মক্কায় মারা যান চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ছনহরা গ্রামের মাহমুদুল হক (৬৭), ঢাকার দোহারের নারিশা পশ্চিম ঘরের গ্রামের বাসিন্দা মো: আবদুস সালাম (৫৩), কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার সিদলাই গ্রামের মোহাম্মদ মোহরম আলী (৬৪)। গত সোমবার বেগম তাহমিনা নাসরিন (৪৭) নামে এক নারী হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। ১২ জুলাই শুক্রবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বাঙ্গরাবাজার থানা আন্দিকোট গ্রামের আবুল হাশেম (৬১) ও বগুড়া জেলা সোনাতলা থানার বালুয়া গ্রামের সালজার রহমান (৬১) মারা যান। গত ৬ জুলাই মক্কায় ঢাকার পল্লবীর সেলিম (৫৬) মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement