২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনে শেষ করতে হবে হাইকোর্টের ৭ দফা নির্দেশনা

-

ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচারকাজ নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে তাগাদা দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মামলার শুনানি শুরু হলে প্রতি কার্যদিবসে টানা মামলা পরিচালনা, মামলায় সাক্ষীর উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়সহ ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, তিন-চার বছরের বাচ্চারা ধর্ষিত হবে, মামলার বিচারকাজ তাড়াতাড়ি শেষ হবে না, তা দুঃখজনক। ধর্ষণ মামলার চার আসামির জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার সাত দফা নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেন। আদালত আদেশে বলেছেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাত দফা নির্দেশনা দেয়া হলো :
১. দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূহে বিচারাধীন ধর্ষণ এবং ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। ২. ট্রাইব্যুনালগুলোকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০- এর ধারা ২০ এর বিধান অনুযায়ী মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে। ৩. ধার্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি জেলায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। যেসব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সেসব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটররা মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। ৪. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। ৫. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন। ৬. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিসিয়াল সাক্ষীরা যেমন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সন্তোষজনক কারণ ব্যতিরেকে সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ প্রদান বিবেচনা করবেন। ৭. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে ওই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর অবিলম্বে পাঠাতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ২৮ জুন তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে পুলিশ গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর আসামি মো: রাহেল ওরফে রায়হানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এই মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ গঠন না হওয়ায় বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি জামিন আবেদন করেন। গত ১ জুলাই ট্রাইব্যুনাল জামিন আবেদনটি খারিজ করলে সে আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন আসামি। হাইকোর্ট এ আসামির জামিন আবেদনটি নামঞ্জুর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনজীবী গোলাম আক্তার জাকির।
২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর নোয়াখালীর নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সারোয়ার রুবেল ও এমরানকে আসামি করে মামলা করেন এক তরুণী। এই মামলায় আসামি দু’জনকে গত বছরের ২৯ মে এক বছরের জন্য জামিন দেন হাইকোর্ট। এই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নোয়াখালীর নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ জামিন আবেদন করেন আসামিরা। গত ৩ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়। এই আদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামিরা। হাইকোর্ট তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন বলে জানান তাদের আইনজীবী মার্জিয়া জামান।
গত বছরের ১৭ মার্চ রাজধানীর শনিরআখড়ায় ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০ মার্চ শিশুটির মা সেকেন্দার আলীকে আসামি করে ডেমরা থানায় মামলা করেন। গত ২৪ জুন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন সেকেন্দার আলী। সে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মো: আব্দুল্লাহ আল মাহবুব। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন, হাসিনা মমতাজ ও মৌদুদা বেগম।

 


আরো সংবাদ



premium cement