২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এরশাদের লাশ আজ নেয়া হচ্ছে রংপুরে

সংসদ ও বায়তুল মোকাররমে নামাজে জানাজা দলীয় কার্যালয়ে শেষ শ্রদ্ধা
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ : সংগৃহীত -

না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পর এবার জাতীয় সংসদ থেকে চিরবিদায় নিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ আসর তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে এরশাদের লাশ ফ্রিজারভ্যানে আবার সিএমএইচের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বায়তুল মোকাররমের জানাজায় অংশ নিতে আসরের নামাজের এক ঘণ্টা আগে থেকেই এরশাদের অসংখ্য ভক্ত, নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি মসজিদে আসতে থাকেন। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ ফ্রিজারভ্যানে বায়তুল মোকাররম মসজিদে আনা হয়। এ সময় জাতীয় মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদে জায়গা না পেয়ে অনেকেই উত্তর ও দক্ষিণ পাশের রাস্তায় জানাজার নামাজে অংশ নেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বি মিয়া, চিফ
হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ নানা স্তরের মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণ প্লাজার টানেলের নিচে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৯ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার প্রথম নামাজে জানাজা এদিন ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ প্রথমে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র নেতারা, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় নেতাদেরকে সাথে নিয়ে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি জাতীয় মহিলা পার্টির সভানেত্রী হিসেবে এরশাদের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
নামাজে জানাজার আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার স্ত্রী ও বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ এবং আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তার ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
রওশন এরশাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর পক্ষে দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব একজন ভদ্র, মার্জিত মানুষ ছিলেন। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন।’ তিনি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দলে দলে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আসতে থাকেন। নামাজে জানাজা ঘিরে সংসদ ভবন এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। ঠিক পাঁচ মাস পাঁচ দিন আগে ১০ ফেব্রæয়ারি এই সংসদেই এরশাদ এসেছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে। সেদিন হুইল চেয়ারে করে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন। সোমবার শেষ বিদায় নিতে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আসে সাবেক রাষ্ট্রপতির কফিন।
জানাজায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, মাহবুবউল আলম হানিফ, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শামসুল হক টুকু, এ বি তাজুল ইসলাম, কর্নেল অব. ফারুক খান, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবের হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব:) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আব্দুস সোবহান গোলাপ, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও নামাজে জানাজায় শরিক হন।
এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর কাকরাইলে তার প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান দলের নেতাকর্মীরা। পরে সেখান থেকে এরশাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। সেখানে তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আবারো সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয় সাবেক এই রাষ্ট্রপতির লাশ। আজ মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজের এলাকা রংপুরে। সেখানকার জিলা স্কুল মাঠে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ নামাজে জানাজা হবে। এরপর সেখান থেকে লাশ ঢাকায় এনে দাফন করার কথা রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। এরশাদের দাফন বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে সিদ্ধান্ত হবে।
শেষবারের মতো দলীয় কার্যালয়ে
এ দিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাশ রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছার পর চারিদিকে নেতাকর্মীদের কান্নায় এক শোকাবহ তৈরি হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি মানুষের দীর্ঘ লাইন। সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে একবার হলেও শেষ দেখা দেখেছেন তারা। পার্টি অফিসের মূল ফটকের সামনে লাশবাহী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িটি রাখা হয়। লাশের মাথার কাছে গাড়ির দরজা খুলে দেয়া হয়। আর গøাসের ওপর দিয়ে শেষ দর্শন করেছেন নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। পশ্চিম দিকে লম্বা লাইন ধরে এগিয়ে এসে কেউ ফুল দিয়ে, কেউবা চোখের পানি ফেলে চলে যান। আবার কেউ কেউ হাউমাউ করে কেঁদে আর্তনাদ করেন। এদের অনেকেই দলের কোনো নেতা বা কর্মী নন। অনেক সাধারণ মানুষকেও দেখা গেছে নীরবে চোখ মুছতে। এ সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এরশাদের কফিনে। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, জন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, ডিপিডিসি শ্রমিক ইউনিয়নসহ বেশ কিছু পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধানকে।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাঈদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর শিকদার লোটন, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, আরিফ খান, জহিরুল আলম রুবেল, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক ভুঁইয়া, দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা
বিকেল সোয়া ৪টায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নেয়া হয়। এখানে তার তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব মিজানুর রহমান। জানাজায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা শরিক হন। জানাজা শেষে মরহুমের লাশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ সময় জি এম কাদের বলেন, দেশ, জাতি, ইসলাম ধর্ম ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে এরশাদের অনেক অবদান আছে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ইন্তেকাল করেছেন। আপনারা সেটা জানেন। ওনার বর্ণাঢ্য জীবন আছে, সেটাও আপনারা জানেন। ওনার রাজনৈতিক জীবন আরো বেশি বর্ণাঢ্য ছিল।’ কাদের বলেন, ‘দেশ ও জাতি, ইসলাম ও ধর্মের জন্য, মানুষের জন্য ওনার অবদান আছে। মানুষের ভুল ত্রæটি থাকে, ওনারও ভুলত্রæটি ছিল, আপনারা সেগুলো মাফ করে দেবেন। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই ওনার জন্য। এ সময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার পরিচালনায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এরশাদ জীবনে কারো সাথে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তা ক্ষমা করার অনুরোধ জানান রাঙ্গা।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে অনুষ্ঠিত এরশাদের জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, শূরাসদস্য অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, জামায়াত নেতা হেমায়েত হোসেন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন,ডা: ফখরুদ্দিন মানিক ও আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ ।
এরশাদের লাশ যাচ্ছে রংপুরে
সরকার মাজহারুল মান্নান রংপুর অফিস থেকে জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কফিন আজ বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে রংপুর আসবে। তাকে দাফন করতে পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে প্রস্তুত করা হয়েছে কবর। এর আগে তার কফিনে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পল্লী নিবাসে তাকে দাফন করার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা এলে তা প্রতিহত করে ওছিয়তকৃত স্থানেই দাফন করার ঘোষণা দিয়েছেন উত্তরাঞ্চল জাতীয় পার্টির নেতারা।
শোকে স্তব্ধ উত্তরাঞ্চল : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ রংপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার প্রতিটি জেলা ও উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কার্যালয়ে এরশাদের মৃত্যুর পরপরই নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। সবার চোখে পানি। মুখে কথা নেই। রোববার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করেছেন। মসজিদে বাসাবাড়ি ও অফিসে চলছে কুরআনখানি। রংপুর মহানগরীসহ উত্তরের জেলা ও উপজেলা সদরের মোড়ে মোড়ে মাইকে বাজছে কুরআন তেলাওয়াত। ছেয়ে গেছে শোকের ব্যানার-ফেস্টুনে। বিশেষ করে মহিলারা কুরআনখানি ও নফল নামাজ পড়ছেন এরশাদের জন্য। এ দিকে আজ এরশাদের স্মরণে রংপুরের সব ব্যবসায়ী সংগঠন বেলা ২টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, এরশাদ স্যার আমাদের জন্য অনেক করেছেন। আজ তিনি নেই। তার সম্মানে আমরা আধাবেলা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওষুধ খাবার ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
নামাজে জানাজার জন্য প্রস্তুত কালেক্টরেট মাঠ : রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক জাহিদ হোসেন লুসিড নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আজ বেলা ১১টায় এরশাদ স্যারকে বহনকারী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসের হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করবে। সেখান থেকে তার লাশ নেয়া হবে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। নামাজে জানাজায় ইমামতি করবেন রংপুর করিমিয়া নূরুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইদ্রিস আলী।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন জানান, জানাজা নামাজ শেষে স্যারের লাশ নিয়ে যাওয়া হবে পল্লী নিবাসে। সেখানে লিচুতলায় তাকে দাফন করা হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিজের গড়া লিচুতলায় প্রস্তুত কবর : রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির জানিয়েছেন, এরশাদ স্যারের পল্লী নিবাসের ক্যাম্পাসের ভেতরে গড়া পিতা মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের লিচু বাগানের উত্তর-পূর্ব পার্শ্বে কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র মোস্তাফজিুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে জেলা ও মহানগর নেতাদের উপস্থিতিতে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে কবর খনন করা হয়। পরে কবরটি নগরীর দর্শনা মোড় এলাকার জাতীয় পার্টি কর্মী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, আশরাফ আলী ও রোকনুদ্দিন এবং বালাপাড়া এলাকার জাকির হোসেন ও সবুজ আহমেদ প্রস্তুত করেন। এখন কবরটি নেতাকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন।
দাফনে বাধা দিলেই প্রতিহত করার ঘোষণা : উত্তরাঞ্চলের মানুষের শরীরে একফোঁটা রক্ত থাকতেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর কোনো সংরক্ষিত এলাকায় হতে দেবে না। তার ওছিয়তকৃত স্থান রংপুরের পল্লী নিবাসেই এরশাদকে দাফন করা হবে। আজ লাশ রংপুরে আসার পর সেটি যদি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা হয়, তবে রংপুরের লাখ লাখ মানুষের লাশের ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গতকাল রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় পার্টির যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন মেয়র মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা বলেন, আগেও শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়েছিল। সে কারণে মৃত্যুর সময়েও তার নামে ঝুলছে দু’টি মিথ্যা মামলা। তার মৃত্যুর পরেও তাকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করার অপচেষ্টা চলছে। রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষ এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না।
মোস্তফা আরো বলেন, আমরা ঢাকার খোলা স্পেসে তাকে দাফন করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা এরশাদের দেয়া জাতীয় তিন নেতার মাজারের পাশে অথবা সংসদ ভবনের পাশে আসাদ গেট এলাকায় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কবরের পাশে জায়গার জন্য সরকারকে বলেছিলাম কিন্তু সেটা সরকার দেয়নি। উল্টো তাকে সেনানিয়ন্ত্রিত বনানী কবরস্থানে দাফন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে রংপুর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফয়সাল চিশতীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা : রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্যারের কবর ঢাকার সেনানিবাসে দেয়ার ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতী ষড়যন্ত্র করার কারণে তাকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি লাশের সাথে রংপুরে এলে তাকে প্রতিহত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement