২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছাত্রদলের কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণা

প্রার্থী হতে পারবে না বিবাহিতরা, ১৫ জুলাই ভোট
নয়াপল্টনে গতকাল বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ব্রিফিং :নয়া দিগন্ত -

অবশেষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। তবে বিবাহিতরা কোনোভাবেই কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবে না বলে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা হয়। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় সাবেক ছাত্রদল নেতা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এ বি এম মোশারফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজসহ বহু ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল-২০১৯ উপলক্ষে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা বাছাই কমিটির প্রধান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নব উদ্যমে ছাত্রদলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৫ জুলাই কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, বাছাই ও আপিল কমিটি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভোটার তালিকা প্রকাশ করাসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন ছাত্রদলের একটি পক্ষ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ছাত্রদলের কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণা করে বলেন, আজ ২৪ জুন ভোটার তালিকা প্রকাশ, ভোটার তালিকা বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ ২৫ জুন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৬ জুন, প্রার্থীদের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ ২৭ ও ২৮ জুন, প্রার্থীদের থেকে মনোনয়ন গ্রহণ ২৯ ও ৩০ জুন, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ১, ২ ও ৩ জুলাই, প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ ৪ জুলাই, প্রার্থীদের সম্পর্কে আপত্তি গ্রহণ ৫ জুলাই, প্রার্থীদের সম্পর্কে আপত্তি নিষ্পত্তি ৬ জুলাই, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ৭ জুলাই এবং ১৫ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলবে। ১৩ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান খায়রুল কবির খোকন।
সাংবাদিকেরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে জানতে চান যে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম নির্বাচনের দিনই ঘোষণা করা হবে কি না? জবাবে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সেদিনই ঘোষণা করা হবে। শুধু সভাপতি বা সাধারণ পদে নির্বাচন কেনÑ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টেকনিক্যালি শুধু ওই দুই পদে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এটা নিয়ম। অন্য পদগুলোতে নির্বাচন হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা এই নির্বাচনের প্রার্থী হবেন তাদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। বিবাহিতরা প্রার্থী হতে পারবেন না, তারা তো ছাত্র না। ভোট গ্রহণের স্থান কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোট গ্রহণের স্থান এখনো ঠিক হয়নি। আর যে জায়গায় আমাদের সুবিধা হবে, সে জায়গায় আমরা করব। দুই-এক দিনের মধ্যে এটা আপনাদের জানানো হবে। ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে সাবেক নেতাদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি বিলুপ্তির পর তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কার্যালয়ে থাকেন। সুতরাং তাকে টার্গেট করা তো সমীচীন নয়, এটা শৃঙ্খলার মধ্যে পরে না। তাই এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আর পার্টি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটা যথাযথ সিদ্ধান্ত।
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ ১২ নেতার বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে দুদু বলেন, ২০০০ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তাকে ভিত্তি করে প্রার্থী হবেন। তাদের সেশন হবে ১৯৯৮ সালে রেজিস্ট্রেশন। ছাত্রদল একটি নিয়মশৃঙ্খলার ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন ডাকসু, রাকসু, ইকসুর নেতৃত্বে দিয়েছে। এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই যেখানে এ সংগঠন নেতৃত্ব দেয়নি। এটা স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রধান ছাত্র সংগঠন। সেই সংগঠনের কেউ যদি নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে যায়, গঠনতন্ত্র মোতাবেক তারা একটা শাস্তির আওতায় আসে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি, মামুনুর রশীদ মামুনকে সিনিয়র সহসভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর নতুন কমিটি গঠনের কথা। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে গঠনতন্ত্র মেনে দুই বছর পরপর কমিটি করতে পারেনি ছাত্রদল। ফলে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। একপর্যায়ে ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের লক্ষ্যে গত ৩ জুন ঈদের একদিন রাতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে বিএনপি। সেখানে বলা হয়Ñ প্রার্থীকে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে হবে এবং ২০০০ সালের পরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু কমিটি ভেঙে দেয়ার ঘোষণা এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বয়সের শর্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে টানা কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন বাতিল হওয়া কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আন্দোলনরত ছাত্রদলের সাবেক ১২ জন নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপর দিনই ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করল নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।


আরো সংবাদ



premium cement