২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সিপিডির আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী

‘বাজার প্রভু’র চাহিদা অনুযায়ী অর্থনীতিতে বরাদ্দ দেয়া হয়

বাজেট বিত্তশালীদের সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে : অর্থনীতিবিদরা ; ‘বাজার প্রভু’রা সংসদ সদস্য ব্যবসায় ও রাজনীতিক : আমীর খসরু
গুলশানে গতকাল সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা :নয়া দিগন্ত -

সিপিডির বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে দেশের নি¤œ ও মধ্যআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়বে। সেই তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বিত্তশালীরা। দারিদ্র্যবিমোচনের সাথে সাথে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক বৈষম্য। এটি নিয়ে আলোচনা কম হয়। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বাজার প্রভু’র চাহিদা অনুযায়ী অর্থনীতিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। বৈষম্য থাকেই, এখনো আছে। আর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাজার প্রভু’ কারা? ওরাই ‘বাজার প্রভু’ যারা সংসদে আছেন, ব্যবসায় আছেন, রাজনীতিতে আছেন। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছেন। এই চক্রের মধ্যেই বসে আছে ‘বাজার প্রভু’।
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট ডায়ালগ ২০১৯ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোহবানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, মোকাব্বির খান, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম, শিক্ষাবিদ ড. কুদরাত-ই-খুদা, তাবিথ আউয়াল, সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম, এফবিসিসিআই উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার মো: নুরুর আমীন, উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের আয়েশা খানম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজার প্রভুর চাহিদা অনুযায়ী অর্থনীতিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। দুই মাঠ নিয়ে খেললে দুই রকম খেলাই হবে, এক রকম নয়। আমরা হাওর-বাঁওড়সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সাথে কথা বলে বাজেট তৈরি করি, বরাদ্দ দিই। তারাই বলেন, ১০ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। আর আপনারা লেকশোর হোটেল, প্রেস ক্লাব ও অফিসে চা খেতে খেতে আলোচনা করেন। মাঠের ভিন্নতার কারণে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
বৈষম্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আপনারাই বইয়ে পড়ান, প্রথম দিকে উন্নয়নের জোয়ারে বৈষম্য বাড়বে। পরে এটা কমবে। বৈষম্য কমার জন্য আমরা বিশাল বিশাল সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রাম করেছি। অবকাঠামো যেগুলো বানাচ্ছি গ্রামাঞ্চলে স্কুল, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্য দূর করব। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূর করা। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সেবার দ্বারা দারিদ্র্যকে আঘাত করব।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব নয়- এটা আল্টিমেটলি তো একই কথা। ব্যবসায়ীবান্ধব যদি হয়, ব্যবসাবান্ধবও হয়ে যাবে। ব্যবসার ঘাড়ে কে বসে আছে? ব্যবসা হর্স (ঘোড়া), আর ব্যবসায়ী রাইডার (চালক)।
বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয় উল্লেখ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেন, নতুন এই বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব নয়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ওনারা (সরকারের মন্ত্রী) যেখানেই যান, সেখানেই জনগণের অংশগ্রহণই যদি দেখতে পান, তাহলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। ভোটের আগের রাতে কারচুপি, ভোটের দিন কারচুপি করার দরকার কি? ভোট কারচুপির পর আবার রেজাল্ট দেয়ার সময় আবার আরেক কারচুপি। তিনবার ভোট চুরি করার তো প্রয়োজনই হয় না। কারণ জনগণের সাথে যদি সেই সম্পর্ক থাকে। তিনি বলেন, তাহলে ভোটাধিকারটি ফিরিয়ে দিন। জনগণকে দায়িত্ব দিন, তারা যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কারা সংসদে যাবে, কারা সরকার গঠন করবে। বাজেটের সাথে জনগণের সম্পর্ক কী হবে সেটা জনগণ যেন নির্ধারণ করতে পারে। এই জিনিসটা খুবই প্রয়োজন।
আমীর খসরু বলেন, প্রবৃদ্ধি উৎসের সূচকগুলো এত প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাহলে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে এলো? এত প্রবৃদ্ধি আসলে এক ধরনের বুঁদবুঁদ। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির হিসাবটি এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সময় এখন বাংলাদেশের। কিন্তু ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে।
আলোচনায় সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটা বাজেট যা সরকারের চরিত্রকে খুব স্পষ্ট করে দেয়। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ। বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। দরিদ্র ও ধনীর মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। কিন্তু এই বৈষম্য কমানোর কোনো কথা প্রস্তাবিত বাজেটে বলা নেই। তিনি বলেন, অতি ধনী মানে ২৫০ কোটি টাকার ওপরে যাদের সম্পদ। গরিব বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এটা না বাড়লে কর্মসংস্থান কিভাবে বাড়বে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার কথা বলছে তাতে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
ফজলুল আজিম বলেন, কোনো খাতেই স্বচ্ছতা নেই। নেই কোনো জবাবদিহিতা। সরকার প্রবৃদ্ধির যে অঙ্ক বলে তাতে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে।
মঞ্জুর আহমেদ বলেন, বাজেটে ব্যাংকিং খাত উন্নয়নে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই।
মোকাব্বির খান বলেন, যেখানে তিন হাজার কোটি টাকা খেলাপির জন্য জেল হয়। আর রাষ্ট্রের চার লাখ কোটি টাকা উধাও হবে, কিভাবে মানুষ বিশ্বাস করবে? তিনি বলেন, দুর্নীতি আজ মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করা। যেমনটি করা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। যারা সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে তাদেরও এখানে বিচার করা।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এবারের বাজেটে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের জরুরি সংস্কারের বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে আসেনি। আমরা বাজেট প্রত্যাশিত কোনো সংস্কার দেখতে পাইনি। এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারসংক্রান্ত সংস্কারের উদ্যোগও তেমন নেই। এসব সংস্কার ছাড়া বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
ড. রেহমান সোবহান বলেন, বাজেট নিয়ে যত আলোচনা হয়, সেখানে শুধু বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বরাদ্দের অর্থ খরচ করার পর কী ফল পাওয়া গেল, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এ দেশে ব্যাপক দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে, এটা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু দারিদ্র্যবিমোচনের সাথে সাথে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক বৈষম্য। এটি নিয়ে আলোচনা কম হয়। ভর্তুকি দিচ্ছি, করে ছাড় দিচ্ছি, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিচ্ছি। এই ধরনের সুবিধার কারণেই সমাজে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা? কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার

সকল