২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাজেটে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ\

অবৈধপথে মোবাইল আমদানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

-

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর অতিরিক্ত করারোপের ফলে অবৈধপথে মোবাইল সেট আমদানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাতে পারে সরকার। শুধু তা-ই নয়, নি¤œমানের ও নকল এসব হ্যান্ডসেট কিনে প্রতারিত হতে পারেন গ্রাহকেরা। এসব হ্যান্ডসেট আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও ব্যবহৃত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সে জন্য মোবাইল সেট আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা। তবে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতেই আমদানিকৃত মোবাইলে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও আমদানি বাড়ছে। গত বছর প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ফোন সেট আমদানি হয়েছে। এ বছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ২৫ শতাংশই আসছে অবৈধ পথে। মোবাইল হ্যান্ডসেট ও বেতার যন্ত্রপাতি আমদানি করার জন্য ৮৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানকে রেডিও ইক্যুইপমেন্ট ইম্পোর্টার ও ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে কমিশন। এসব প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি মোবাইল ফোন সেট আমদানির অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও থামছে না অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি। এমন প্রেক্ষাপটে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর অতিরিক্ত করারোপ অবৈধ আমদানিকে আরো উৎসাহিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে হুয়াওয়ে, শাওমি, আইফোন, আসুস, অপো, ভিভো, নোকিয়া, মটোরোলা, ওয়ানপ্লাস, ম্যাক্সিমাস, অনার রিয়েলমির মতো ব্র্যান্ডগুলো আমদানিনির্ভর। বিপরীতে দেশে সংযোজিত হচ্ছে স্যামসাং, আইটেল-টেকনো, ওয়ালটন, সিম্ফনি, লাভা, উই, ওকে মোবাইল, উইনস্টার ব্র্যান্ড। স্যামসাং ফ্লাগশিপ মডেলগুলো ছাড়া সব হ্যান্ডসেটই দেশে সংযোজন করে। টেকনোও চাহিদার বড় একটি অংশ এখানে সংযোজন করে।
বর্তমানে আমদানি করা স্মার্টফোনে মোট কর ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। ২০১৯-২০ বাজেটে যা ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে হিসাব অনুযায়ী আমদানির সময় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কর ধার্য হবে। অন্য দিকে দেশে সংযোজিত স্মার্টফোনের মোট কর ১৭ শতাংশের মতো। ২০১৯-২০ বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সঙ্গে স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাবও রয়েছে এতে। আর দেশে উৎপাদন করলে হ্যান্ডসেটের কর হবে মাত্র ৫ শতাংশ, যা নতুন বাজেটে আগের মতোই আছে।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ করা হয়, যা আগে ছিল ৫ শতাংশ। বিপরীতে স্থানীয়ভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরিতে প্রয়োজনীয় সব রকমের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ব্যাপক শুল্কছাড় ও প্রণোদনা দেয়া হয়।
মোবাইল সেট আমদানিকারকদের মতে, এভাবে আমদানি শুল্ক বাড়লে মোবাইল সেটের দামও বেড়ে যাবে। ফলে কম দামে গ্রাহকদেরকে আর হ্যান্ডসেট দেয়া সম্ভব হবেন, গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া আমদানি শুল্ক বাড়ার কারণে বৈধ আমদানিকারকেরা নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের বড় একটি অংশ কালোবাজারিদের দখলে চলে যাবে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে পারে সরকার।
বিটিআরসি ও শুল্ক বিভাগের তথ্য মতে, বছরে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মোবাইল সেট আমদানি হচ্ছে। কিন্তু অবৈধভাবে আমদানির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। যার পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। অন্য দিকে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন। ভোক্তারাও নকল ও নি¤œমানের হ্যান্ডসেট কেনার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব সেটের মাধ্যমে ক্রমেই বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
এ ছাড়া অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমাদানির কারণে ভুয়া/ডুপ্লিকেট আইএমইআই সম্পন্ন সেট ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নানা কর্মকাণ্ড করছে। এতে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। যদিও অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ করতে বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবুও অবৈধপথে ফোনসেট আমদানি থামছে না।
মোবাইল সেট আমদানিকারকদের সংগঠন মোবাইল সেট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, একসময় মোবাইল সেটকে ফ্যাশন হিসেবে দেখা হলেও বর্তমানে এটি একটি নিত্যব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। সে জন্য অবৈধ ও অনৈতিকভাবে সেট আমদানি বন্ধ করতে আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে।
মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বাজেটে বাড়তি শুল্কে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে স্মার্টফোন আমদানিকারকেরা। তাই অবিলম্বে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্র্যানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এর পরিচালক রেজওয়ানুল হক লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে সরকারের মনোভাবকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কিছু জায়গায় বড় গ্যাপ রয়ে গেছে। এর মধ্যে একটা হলো গ্রে মার্কেট। এখানে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। আমদানি কর বাড়ার ফলে গ্রে মার্কেট আরো বেড়ে যাবে। এতে কারখানা স্থাপনকারী, আমদানিকারক বা সরকার কেউই লাভবান হবে না। তাই গ্রে বন্ধ করতে পারলে এটা হবে একটা ভালো উদ্যোগ, আর তা না পারলে বড় ধরনের বিপদে পড়তে হবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement