সরকারের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না : রিজভী

দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ আজ মগ দস্যু ও ঠগিদের অভয়ারণ্য। সেই সাথে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার উচ্চ আদালত কথিত মানহানির অভিযোগে করা বানোয়াট দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। কারণ এই দু’টি ভুয়া মামলা সরকারি দলের যে ব্যক্তি করেছে সে মামলাবাজ ও মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা করেই আনন্দ লাভ করে। তাকে সবাই চেনে ও জানে। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে অসত্য এবং মামলারই যোগ্য নয়। তা কেবল প্রতিহিংসামূলক। তার প্রমাণ হলো- মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন দিলে সে ক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’
রিজভী গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিছুদিন আগে লন্ডন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য আর ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় বোঝা যায়, জামিনযোগ্য হলেও সরকারের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। অর্থাৎ সরকার যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কোনো হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন হবে এবং তিনি মুক্তি পাবেন। কালবিলম্ব না করে সামনে আর দু’টি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রীর জামিন নিশ্চিত হলে উচ্চতর আদালতের ওপর মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে। ওই দু’টি মামলায় নি¤œ আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে।
তিনি বলেন, নি¤œ আদালতের ওই সাজার ওপর আপিল করা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হয়নি। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা থাকলে বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া যেত না। আমরা আশা করব উচ্চতর আদালত সব চাপকে উপেক্ষা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং জনগণের নেত্রী জনগণের মধ্যে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরো আশা করব দেশনেত্রীর জামিন নিয়ে সরকার আর কোনো কারসাজি করবে না, বাধা দেবে না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, মঙ্গলবার থঅনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোটগ্রহণে আওয়ামী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে। ২০টি উপজেলার প্রায় সবখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল দলীয় ক্যাডারের মতো। নৌকা প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যারা প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের ঠেকানোর জন্য মাঠে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাতে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নৌকার প্রতীকে ভোট না দিলে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হয়। এই আওয়ামী জবরদস্তিমূলক শাসন দীর্ঘায়িত হতে থাকলে নির্বাচন শব্দটি থাকলেও সুষ্ঠু শব্দটি পরলোকেই অবস্থান করবে। ভোটার থাকলেও ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নির্বাচন কমিশন ভোট তামাশার রঙ্গমঞ্চে প্রধান অভিনেতা হিসেবেই ভূমিকা পালন করবে।
রিজভী বলেন, মানুষের জীবন-যাপন ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ঠগিদের ওপর। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো মানুষ অথবা যেকোনো পরিবারের যেকোনো সদস্য গুম হয়ে যেতে পারে ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সাথে যদি তার ন্যূনতম মনোমালিন্য হয়। দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে। প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা গুমের দায়িত্বে আছে তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করাচ্ছে। বর্তমান সরকারেরই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।