২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাজেট নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

-

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জোটের বাইরে থাকা সরকার সমর্থক নির্বাচনী জোটভুক্ত দলগুলোও সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। জোটের শরিকদের কেউ কেউ বলছেন, বাজেটের আকার বড়। কিন্তু জনগণকে সন্তুষ্ট করার মতো এখানে কিছুই নেই। এমনকি কৃষক-শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য কোনো রূপরেখা নেই।
যার ফলে দেশ ঋণনির্ভরতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে, যা মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ। এটা অশুভ ইঙ্গিত। ধনিক শ্রেণীকে সন্তুষ্ট করতে এ বাজেট ঘোষণা হয়েছে। আবার শরিকদের কেউ কেউ বলছেন, এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। দেশ উন্নতির দিকেই ধাবিত হচ্ছে বলে বাজেটের আকার বড় করা হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার জন্য যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার যৌক্তিকতা আছে।
এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বাজেটের আকার বড়। কিন্তু জনগণের স্বার্থে নয়। বাজেট হতে হবে জনগণের স্বার্থে। ঋণের নির্ভরতা বেড়েছে, এটা শুভ লক্ষণ নয়। ঋণ করে ঋণের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়েনি। দেশের আয়ের বৈষম্য কমানোর কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো মানুষকে স্পর্শ করে, যেমন- মোবাইলে কর বসানো, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য না দেয়াসহ বিভিন্ন মৌলিক খাতের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। যে বিষয়গুলো জনগণের সাথে সম্পৃক্ত তা উপেক্ষা করা হয়েছে, কৃষকেরা বারবার মার খাচ্ছে। ইসমাইল হোসেন বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে প্রকারান্তরে অবৈধভাবে আয় বৃদ্ধির প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এগুলো বিবেচনা করা ছাড়া জনগণকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বাজেট শ্রমিক কৃষকবান্ধব হয়নি। সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধার জন্য বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষকেরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষক-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলার কোনো বাস্তব প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল নেই বলে মনে করে বাংলাদেশ জাসদ। এক বিবৃতিতে জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানো, প্রত্যক্ষ আয়কর বাড়ানো, কর ফাঁকি রোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও ব্যাংক খাতে দুর্নীতি-লুটপাট প্রতিরোধ করে ঘাটতি মোকাবেলায় কোনো বাস্তব কর্মকৌশল এ বাজেটে নেই। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার পরিসংখ্যান দেখিয়ে আত্মতুষ্টি আছে, কিন্তু এ প্রবৃদ্ধি যে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে না, তার উদ্বেগের কথা নেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটভুক্ত দল ন্যাপের মহাসিচব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া মনে করেন, সরকারের ঘোষিত বাজেট জনদুর্ভোগ আরো প্রকট করবে এবং লুটেরা শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করবে।
বিশাল অঙ্কের এই ঋণনির্ভর বাজেট। বাজেট গণমানুষের কল্যাণে বা বিশাল দরিদ্র জনগণের কথা ভেবে করা হয়নি। এই বাজেটে দুই পদ্ধতিতে ভ্যাট আরোপ হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এতে করের ওপর কর (দ্বৈতকর) আরোপ করা হয়েছে। তখন পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে, যা ভোক্তার ওপর এসে পড়বে। এর ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে এবং এতে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা।
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, সমৃদ্ধির পথ চলায় বৈষম্যের যে সিন্দাবাদের দৈত্য জাতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে তার থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় বাজেটে নেই। বরং মধ্যবিত্তকে চাপে রেখে ধনীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেছেন, পোশাক শিল্পের মালিকদের জন্য প্রণোদনা বাড়লেও পোশাক শিল্প শ্রমিকেরাই সেই তিমিরেই রইলেন। আর যে কৃষক ধানসহ তার উৎপাদিত ফসলের দাম না পেয়ে জেরবার অবস্থায় তাদের পণ্যমূল্য সহায়তারও কোনো ব্যবস্থা নেই বাজেটে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির পেছনে যারা মূল শক্তি সেই কৃষক, শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তা অবহেলিতই রয়ে গেছে এই বাজেটে।
তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তা ইতিবাচক বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন জোটের আরেক অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের সহসভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজেটের আকার কত হলো সেটা বড় কথা নয়, বাস্তবায়নই আসল কথা। আর বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত বড় বাজেট ঘোষণা করেছেন।
জোটের আরেক শরিক গণ আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, বাজেট জনমুখী ও কল্যাণমুখী। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তার যৌক্তিকতা আছে। কালো টাকা সাদা হলে ওই টাকার একটি অংশ স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে। ঋণনির্ভরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে ঋণতো নিতেই হবে। জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুর রহমান সেলিম প্রস্তাবিত বাজেটকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এবারের বাজেট সর্ববৃহৎ। সরকার যদি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত রেখে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement