২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে অনেক সমস্যা : স্বরাষ্ট্র সচিব

দেশের সব কারাগারের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে

-

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারসহ দেশের সব কারাগারের অভ্যন্তরে কী ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে তার সার্বিক চিত্র উদঘাটনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাই এখনই কারাগার নিয়ে পজিটিভ প্রতিবেদন দেয়ার সময় আসেনি। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম তদন্ত করতে গিয়ে অনেক সমসাই উঠে এসেছে। পর্যায়ক্রমে সব কারাগারে গোপনে তদন্ত চালানো হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো: শহিদুজ্জামান গত রোববার সচিবালয়ে তার দফতরে নয়া দিগন্তকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, সমস্যা তো সব জায়গাতেই আছে। আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। আর যে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা যত বেশি সেই কারাগারে সমস্যাও তত বেশি।
ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কাশিমপুরে (৩) একমাত্র মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৮টি বিভাগে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার আর ৫৫টি রয়েছে জেলা কারাগার। প্রতি বিভাগে থাকা কারাগারগুলোর কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হচ্ছে একজন ডিআইজি (প্রিজন) দিয়ে। ৭ বিভাগ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের ওপর নেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কারা অধিদফতরে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা। সম্প্রতি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক হিসাবে যোগ দিয়েছেন কর্নেল মো: আবরার হোসেন।
দেশের কারাগারগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরেই অনিয়ম চলছে নীরবে নিভৃতে। তবে বন্দীর স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া মাদকসহ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়ে ঢাকাসহ বেশ কিছু কারাগারের জেলার ও সুপাররা অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার পরও সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক কারাগারের অভ্যন্তরে অনিয়ম দুর্নীতি মাত্রা বাড়তে থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ তদন্তে উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজির নিয়ন্ত্রণাধীন কারাগারগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজারসহ দেশের কারাগারগুলোতে কর্মকর্তা পাঠিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে অভ্যন্তরে পত্রিকায় প্রকাশিত ফ্রি স্টাইলে অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গোপনে তদন্ত করা হয়েছে। এতে সেখানে অনেক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, কারাগারগুলোতে বন্দীদের খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে যেসব করণীয় অনেক কারাগারে তাও করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব।
মূলত কারাগারের ভিশন হচ্ছে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এই স্লোগানে বন্দীদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করা, কারাগারে কঠোর নিরাপত্তা ও বন্দীদের মাঝে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বন্দীদের সাথে মানবিক আচরণ করা। যথাযথভাবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা। একই সাথে একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পঞ্চগড়সহ বেশ কিছু কারাগারে ঘটছে ঠিক তার উল্টো চিত্র।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরিকে পরিকল্পিতভাবে খুন করার অভিযোগে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে অমিত মুহুরিকে রিপন নামের যে বন্দী খুন করেছেন, তাকে ইতোমধ্যে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে একজন আইনজীবীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সেটির তদন্ত চলছে। কাশিমপুর কারাগার ২ এ বিস্ফোরকদ্রব্য মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বন্দী মিয়ানমারের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে দুই দিন আগে। একের পর এক নিরাপদ কারা অভ্যন্তরে ঘটনা ঘটতে থাকায় কারা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও উদ্বিগ্ন।
এসব প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মো: শহিদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে যে বন্দী মার্ডার করেছে সে স্বীকার করেছে। তবে কেন মার্ডার করেছে সেটি পুলিশ বলতে পারবে। কারণ এটা পুলিশ তদন্ত করছে। কারাগারের অভ্যন্তরে ইট এলো কোত্থেকেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ড্রেন থেকে ইঁদুর ওঠে। সেটি ইট দিয়ে বন্ধ করা ছিল। শুনেছি সেই ইট দিয়ে নাকি মারা হয়েছে। এখন বিষয়টি তদন্ত হলে বোঝা যাবে।
কারাগারগুলো নিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট করা যায় কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র সচিব নয়া দিগন্তকে বলেন, সেই সময় এখনো আসেনি। সমস্যা তো সব জায়গাতেই জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানেই মানুষের সমাগম বেশি সেখানেই সমস্যা বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে অনিয়ম বেশি হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে ওই কারাগারের তদন্ত করিয়েছি। আমাদের অফিসারের পরিচয় না বলে পাঠিয়েছি। তদন্তে কী ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে অনেক সমস্যাই। আর এ কারাগারে তদন্তে যে চিত্র পাওয়া গেছে সেটি তো প্রায় সব কারাগারের চিত্র। এগুলো আমরা একটা পর্যায়ে আনি তার পর ওভারঅল প্রতিবেদন তৈরি করত পারব। কারাগারে খাবারের দাম বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওইটা আমরা চেষ্টা করছি। খাবারের দাম থাকবে প্রতিটি রুমে। মনিটর দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে সব আদেশ নির্দেশ থাকবে। কারাগারের সার্বিক চিত্র সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় তদন্ত করেছি। তবে তিনি এ-ও বলেন, বেসরকারি কারা পরিদর্শকরা যদি সক্রিয় হতেন তাহলে এ ধরনের সমস্যা থাকত না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কারাগারে লোক বেশি থাকে। সেখানে সমস্যাও বেশি।
গত রোববার বিকেলে কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি কারা অধিদফতরে যোগ দেয়ার পর বন্দীদের জন্য সকালের নাশতার মেনুতে পরিবর্তন আনাসহ বেশ কটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আরো সুন্দর সুন্দর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইউরোপ ও কিরগিজস্তানগামী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্রে অনিয়ম চুয়েট বন্ধ ঘোষণা : ভিসি অফিসে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তালা এলএনজি ও সার আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৮ প্রস্তাব অনুমোদন মাহাথিরের ছেলেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু থাইল্যান্ডে হিটস্ট্রোকে ৩০ জনের মৃত্যু বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে দুর্ঘটনা ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া- জেগেছে রাঙা মঞ্জুরি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৫ জন গ্রেফতার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে উত্তরের ১২ উপজেলায় মানববন্ধন, সমাবেশ প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে : রিজভী উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রের ধারা ক্ষুণ্ণ হবে : সিইসি

সকল