২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুরসির ইন্তেকালে বিভিন্ন সংগঠনের শোক

-

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। দীর্ঘ দিন কারা নির্যাতিত মুরসি আদালত চত্বরে মৃত্যুবরণ করায় নেতারা তাকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ এবং সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করে এক যুক্ত শোকবাণীতে বলেন, মিসরের ইতিহাসে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি দেশের একটি আদালতের এজলাসে রহস্যজনকভাবে ইন্তেকাল করার দুঃখজনক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। তার রহস্যজনকভাবে ইন্তেকালে আমরা একজন স্বজন হারানোর গভীর বেদনা অনুভব করছি। ড. মুরসির রহস্যজনকভাবে ইন্তেকালে গোটা মুসলিম উম্মাহ গভীরভাবে শোকাভিভূত ও মর্মাহত। মিসরের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে ২০১৩ সালে জে. আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি অবৈধভাবে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেন। অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় ৬ বছর অবৈধভাবে কারাগারে আটক রেখে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। সেই থেকেই মিসরের জনগণ ও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের ওপর চলছে হত্যা, জুলুম-নির্যাতন। এছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। জে. সিসি মিসর থেকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও ন্যায়বিচার নির্বাসনে পাঠিয়ে গোটা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছেন। সেখানে কারো জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। জে. সিসির সরকারের চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ড. মুরসি আদালতের এজলাসে রহস্যজনকভাবে ইন্তেকাল করেছেন। এ ঘটনা মিসর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের জ্বলন্ত উদাহরণ। ইসলামি আদর্শ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার এ আত্মত্যাগ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ ও সব মুক্তিকামী জনতা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
আল্লাহ তায়ালা ড. মুরসির জীবনের সব নেক আমল কবুল করে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দান করুন। আমরা তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, দলীয় সহকর্মী ও মিসরের শোকসন্তপ্ত জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে দোয়া করছি আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।
খেলাফত মজলিস : মিসরের স্বৈরাচারী জালিমশাহী সিসির হাতে বন্দী মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইসলামি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হাফেজ ড. মোহাম্মদ মুরসীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, মিসরের অবিসংবাদিত নেতা শহীদ মোহাম্মদ মুরসি আমৃত্যু সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে এক মহান নেতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আদর্শের ওপর অবিচল ছিলেন। স্বৈরশাসকের জুলুম নির্যাতন ভয়ভীতি কোনো কিছুই তাকে সত্যের পথ থেকে এক চুল পরিমাণ নড়াতে পারেনি। তিনি মিসরের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কুরআন, সুন্নাহ তথা ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে জাতিকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইহুদিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের ক্রীড়নক তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক বছরের মাথায় অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে রাখে। কারাগারে জুলুম নির্যাতন আর বিচারের নামে অবিচারের শিকার হয়ে বিচারকক্ষেই শাহাদত বরণ করেন একজন হাফেজে কুরআন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। শহীদ প্রেসিডেন্ট মুরসির মতো মিসরের হাজার হাজার জনতাকে গ্রেফতার নির্যাতন ফাঁসি দিয়ে জঘন্য ও ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন জালিমশাহী সিসি ও তাদের দোসররা একদিন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু সত্য, ন্যায় ও আদর্শের প্রতি অবিচল এবং আপসহীন শহীদ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ও তার সাথীরা জুলুম নির্যাতন সহ্য করে, শাহাদত বরণ করে ইতিহাসের মহানায়ক হিসবে বেঁচে থাকবেন অনাগত কাল। তাদের এ আত্মত্যাগ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তির পথ দেখাবে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় শহীদ ড. মোহাম্মদ মুরসির রূহের মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে আশা করেন প্রেসিডেন্ট মুরসির আত্মত্যাগের বদৌলতে মিসরের জনগণ শিগগিরই বর্তমান স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্ত হবে এবং মুক্তিকামী নির্যাতিত জনতা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াযী, নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন এক যুক্ত বিবৃতিতে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রেসিডেন্ট মুরসি ছিলেন ইসলামের পক্ষে এক অকুতোভয় বীর সিপাহসালার। ইসলামের শত্রুরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। প্রেসিডেন্ট মুরসির ইন্তেকালে বিশ্ব একজন অবিসংবাদিত মুসলিম নেতাকে হারাল। ইসলামের জন্য তার সাহসী ভূমিকা, অসামান্য ত্যাগ ও কুরবানি বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের জন্য চীরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নেতৃবৃন্দ শহীদ হাফেজ ড. মোহাম্মদ মুরসির রূহের মাগফিরাত কামনা ও মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে জান্নাতে তার উঁচু মাকাক কামনা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
ইসলামি আন্দোলন : মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, নগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম। এক বিবৃতিতে চরমোনাই পীর বলেন, মোহাম্মাদ মুরসি একজন হাফেজে কুরআন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, খোদাভীরু একজন প্রেসিডেন্টের ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও ব্যথিত। মুরসির ইন্তেকালে বিশ্ববাসী একজন অবিসাংবাদিত নেতাকে হারাল। তিনি বলেন, অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্ব¡পূর্ণ নথি পাচারের যে অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছিল, তা ছিল একটি অজুহাত মাত্র। মোহাম্মদ মুরসি শান্তিময় বিশ্ব গড়তে কুরআন সুন্নাহর সংবিধানে রাষ্ট্রের পরিচালনা, আল্লাহর জমিনে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস দমনে ইসলামি জিহাদের বিশ্বাসী হকের ওপর অটল অবিচল একজন আপসহীন নেতা ছিলেন, অন্যায় অবিচার, জুলুম আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সদা তিনি সোচ্চার ছিলেন বলেই তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। নেতৃবৃন্দ মোহাম্মদ মুরসির শোকাহত পরিবার ও মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাকর্মীর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
খেলাফতে ইসলামী : মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খেলাফতে ইসলামীর আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে বাংলাদেশসহ বিশে^র ইসলামপন্থী জনতা মর্মাহত, গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বলেন, মিসরের স্বৈরশাসক জেনারেল সিসি অন্যায়ভাবে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারা প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করেছে। মুরসিকে কারাগারে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়নি। তার মৌলিক অধিকার হরণ করে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিল। নিজের ওপর জালিমের নির্যাতনের খড়গ চললেও মাথা নত করেননি তিনি। একটি নির্জন অন্ধকার কক্ষে তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। হাসানাত আমিনী বলেন, মোহাম্মদ মুরসি মিসরে ইসলামী আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক ছিলেন। ন্যায়-ইনসাফ ও জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি আমৃত্যু যে সংগ্রাম করে গেছেন, তা যুগ যুগ ধরে মুসলমানরা স্মরণ করবে। আমি মহান আল্লাহর কাছে তার রূহের রহমত কামনা করি। আল্লাহ তায়ালা তার এই মজলুম বান্দাকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। আমিন।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন : মুরসির কারাগারে মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. মথওলানা মুহাম্মদ এনামুল হক আজাদ। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ডক্টর মোহাম্মদ মুরসিকে নির্জন কারাগারে রেখে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তার মৃত্যু ইয়াজিদি ও ফেরাউনি শাসনের বিরুদ্ধে একজন হোসাইনের এবং মুসা (আ:)-এর অনুসারীর সংগ্রামী শাহাদতবরণ। তারা বলেন, এ মর্মে মুজাহিদের মৃত্যুতে বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তিকামী ও ইসলামী জনতার অন্তরে আঘাত হেনেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ট তাগুতি সরকার কর্তৃক এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই মহান ইসলামী নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
জনসেবা আন্দোলন : বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলাম ও দলের মহাসচিব ইয়ামিন হুসাইন আজমী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, মুরসি একজন মজলুম শহীদ। তার রক্ত একদিন অবশ্যই কথা বলবে। বিশ্বের দরবারে আমাদের দাবি : বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের হৃদয়ের নেতা আধুনিক তুরস্কের রূপকার প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান যেভাবে জেনারেল সিসির সাথে কথা বলা ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক বর্জন করেছে আমরা ওআইসিভুক্ত সব রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধানরা যেন মিসর বনাম জেনারেল সিসির সাথে সব সম্পর্ক বর্জন করে।
ছাত্রশিবির : মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ও তার শাহাদতের কবুলিয়াতের জন্য সবাইকে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বের ইসলামপ্রিয় কোটি জনতার প্রিয় নেতা, মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট, ড. মোহাম্মদ মুরসি স্বৈরাচার জালিম শাসক আব্দুল ফাত্তাহ সিসির আদালতে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইসলামবিরোধী বর্বর শাসকের সাজানো মামলায় আটক থাকা অবস্থায় জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি পরিবারের সান্নিধ্য ও উন্নত চিকিৎসা-বঞ্চিত অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার এই বেদনাদায়ক ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল কর্মী ও বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে শোকাহত। নেতৃবৃন্দ মরহুমের রূহের মাগফিরাত ও শাহাদতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সাথীরা যেন ধৈর্যধারণ করতে পারে সেজন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।


আরো সংবাদ



premium cement