২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এক যুগে সিজারিয়ান বেড়েছে ৮ গুণ ২০১৭ সালে ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ৮১ কোটি টাকা

-

দেশে সিজারিয়ানের (অস্ত্রোপচার) মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার ২০০৪ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে প্রায় আট গুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবে ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৮১ কোটি টাকা। প্রতি সিজারিয়ানে গড়ে ব্যয় হয়েছে ৫১ হাজার ৪৬৯ টাকা। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০০৪ সালে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ শতাংশে। ২০১৭ সালে দেশে যে পরিমাণ সিজারিয়ান প্রসব হয়েছে এর ৭৭ শতাংশ বা ৮৬ হাজারই ছিল অপ্রয়োজনীয়। অন্য দিকে দরিদ্র পরিবারের দুই লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ জন নারীর সিজারিয়ান প্রসবের প্রয়োজন হলেও তারা তা করতে পারেননি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং নবজাতক ও মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, দেশে সিজারিয়ান প্রসবের এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সচ্ছল মায়েরা ব্যথার ভয়ে বা চিকিৎসকদের দ্বারা ভুলভাবে প্রভাবিত হয়ে সিজারিয়ানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। অথচ দরিদ্র যেসব নারীর প্রকৃতই যাদের সিজারিয়ান প্রয়োজন, তারা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। ড. ইশতিয়াক মান্নান ‘বিষয়টিকে একেবারে বিস্ময়কর’ বলে মনে করছেন।
২০১৩ সালে আইসিডিডিআরবির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদপুরের মতলবে ৮০ শতাংশ ডেলিভারি হয়েছে কোনো না কোনো হাসপাতালে। মতলবের আইসিডিডিআরবির সার্ভিস এরিয়ায় এই ৮০ শতাংশের ৩৫ শতাংশেরই সিজারিয়ান হয়েছিল। সিজারিয়ানের মাত্র ১.৪ শতাংশ কেবল প্রয়োজনের নিরিখে করা হয়। এদের মধ্যে ২৪ শতাংশের সিজারিয়ান হয়েছিল আগে অন্য শিশু ভূমিষ্ঠে সিজারিয়ান করা হয় বলে এবং ১৬ শতাংশের সিজারিয়ান হয়েছিল দীর্ঘ সময় কাটানোর কারণে। ২১ শতাংশ সিজারিয়ান হয় ভূমিষ্ঠ শিশুর অবস্থান সঠিক ছিল না অথবা মায়ের পেটে খারাপ অবস্থায় ছিল বলে (ফিটাল ডিস্ট্রেস)।
সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্যানুসারে সিজারিয়ান প্রসবের ৮০ শতাংশ হয় দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। ড. ইশতিয়াক মান্নানের মতে, চিকিৎসা খাতের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও কিছু নীতিবহির্ভূত চিকিৎসক এ জন্য দায়ী। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সন্তান ও মাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, অঙ্গহানিসহ মায়েরা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অন্য দিকে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুর শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, যা তার রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া স্বাভাবিক প্রসবের ফলে মা দ্রুতই শিশুর সাথে শারীরিক যোগাযোগ করতে ও বুকের দুধ পান করাতে পারেন।
অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান প্রসব বন্ধ করতে দক্ষ মিডওয়াইফারি তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে এখন মিডওয়াইফারির সংখ্যা মাত্র আড়াই হাজার।
শিশুর সাথে মায়ের নিবিড় যোগাযোগ শিশু নিরোগ ও স্বাস্থ্যবান দেহের অধিকারী হয়। তা ছাড়া জন্মের পর শিশু রোগাক্রান্ত হলে মায়ের সাথে শিশুর নিবিড় যোগাযোগ হলে শিশু দ্রুত সেরে ওঠে। এটাকে বলে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার। এই ধরনের কেয়ারে শিশুকে মায়ের সাথেই রাখা হয়। মায়ের দেহের সাথে শিশুর দেহকে জড়িযে রাখতে হয়। এ অবস্থায় শিশুর দেহকে বিনা কাপড়ে মায়ের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে হয় মা যতক্ষণ পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে মায়ের সাথে শিশুর একটি যোগাযোগ গড়ে ওঠে এবং শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিকেই ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার বলে। এ পদ্ধতিটি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement