২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিদেশী ঋণে খুলনা ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র

নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে

দুই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল আরো ৩ বছর ; প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় বাড়ল ৬৬৫ কোটি টাকা ; নির্মাণকালীন সুদ গুনতে হবে ১৯৪.২২ কোটি টাকা
-

সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগেরই কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে পারছে না বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন সংস্থা। ফলে নির্মাণকালীন বড় অঙ্কের সুদ গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। চীন থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজে নির্ধারিত দুই বছরে কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৬৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে আরো ৩ বছর। প্রকল্পের নির্মাণকালীন ঋণের সুদ ১৯৪ কোটি ২২ লাখ টাকায় পৌঁছবে বলে নতুন প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের বর্ধিত বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যই এ প্রকল্প। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। খুলনার খালিশপুরের ভৈরব নদের তীরে প্রায় ৬২ একর জমির ওপর নতুন করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের জুনে শুরু করা হয়। ১৯৫৪ সাল থেকেই এখানে বিভিন্ন ক্ষমতার কয়েকটি ইউনিট রয়েছে। চলতি বছরের জুনে বর্তমান প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। পুরনো প্ল্যান্টের নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রম করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ৬০ মেগাওয়াট ও ১১০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট চালু রয়েছে। বাকিগুলোকে অবসর দেয়া হয়েছে। এ দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতাও কমে ৩০ ও ৬০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। ফলে খুলনাসহ আশপাশের এলাকায় এ দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ জন্য সরকার এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির (ইসিএ) আওতায় এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব চায়না থেকে ঋণ সহায়তা নিয়ে প্রকল্পটি শুরু করে। এ প্রকল্পে খরচ হবে তিন হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি খাত থেকে আসবে ৮৯০ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ হিসেবে চীন সরকার দেবে ২ হাজার ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। বাকি ৩৪৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেবে পিডিবি।
পিডিবি সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজগুলো হলোÑ গ্যাস টারবাইন ও স্টিম টারবাইন জেনারেটিং ইউনিট স্থাপন, গ্যাস ও স্টিম ট্রান্সফরমার, পাওয়ার ইভাকুয়েশন সিস্টেম, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, কন্ট্রোল প্যানেল স্থাপন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নতুন এ প্ল্যান্ট থেকে তরল জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে ৩৩৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট এবং গ্যাস ব্যবহার করে ৩৫৭ দশমিক ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের ওপর সম্ভাব্য জরিপ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় পর্যাপ্ত তরল জ্বালানি, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যাবে। এসব বিচার বিশ্লেষণ করেই ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় চীনা কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব জিয়াংসু ইস্টার্ন কোম্পানি লিমিটেড এবং হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ঋণের নিশ্চয়তাও পাওয়া গেছে। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর। ইপিসি চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর। সব আনুষ্ঠানিকতার পর চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এক্সিম ব্যাংকের অনুকূলে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদান করা হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী কাজের মেয়াদ আড়াই বছর। সব কাজ শেষ করে প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরো তিন বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর নন-কনসেশনাল লোন ইফেকটিভ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ অতিরিক্ত ১৫১ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় বা ডিপিপিতে পরামর্শ সেবা বাবদ ব্যয় সংস্থান রাখা হয়েছিল ১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এটি বেড়ে হয়েছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
আর সিডি ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ মূল খরচ ১০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন মেয়াদ পার করে সেই ব্যয় ১২৮ কোটি ৮১ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে ইপিসি চুক্তি মূল্য দুই হাজার ৩৬৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ৫৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা হয়েছে। গ্যাস বুস্টার কম্প্রেসার কেনার জন্য ব্যয় প্রায় ৯৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প শেষ করা গেলে নির্মাণকালীন সুদ দিতে হতো ৯১ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেই সুদ খাতে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট উইং সূত্র জানায়, ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ ও দরপত্র আহ্বান এবং চুক্তি স্বাক্ষরেই দেড় বছর পার হয়ে গেছে। ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদনে ৫ মাস চলে গেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে লোন কমিটির অনুমোদনে এক বছর পার হয়েছে। লেন্ডার ব্যাংকের সাথে ঋণ চুক্তিতেই লেগেছে এক বছর। অর্থাৎ প্রক্রিয়া করতেই প্রকল্পের মেয়াদ পার হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ০.০৪ শতাংশ। এখানে জনবলের বেতন খাতে ১ কোটি ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং পরামর্শকদের খাতে ১ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হবে।  

 


আরো সংবাদ



premium cement
মেক্সিকোয় মেয়র প্রার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহেও ক্লাস বন্ধ ঘোষণা দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

সকল