২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সমৃদ্ধশালী হবে চুয়াডাঙ্গা, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান

-

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এর ফলে দুই দেশে আমদানি-রফতানির দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই বন্দর এ জেলার ব্যবসার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সড়ক পথে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু ছিল। ইন্দো-চায়না ও ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে ওই স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আবার সেটির কার্যক্রম ১৯৭২ সালে চালু হয়। যেকোনো কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ওই স্টেশনটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চালু করার প্রস্তাব রাখলে ভারত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চালু করতে রাজি হয়।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার আব্দুল আলীম জানান, বাংলাদেশের দর্শনার সাথে ভারতের রেল যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু রয়েছে। আবার ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে সপ্তাহের বন্ধের দিন ছাড়া দর্শনা হয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ভারতের কলকাতার চিৎপুর পর্যন্ত যাতায়াত করছে। এ ক্ষেত্রে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য দেশে আমদানিই হচ্ছে, কিন্তু রফতানি করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ভারত থেকে রেলে পণ্য আমদানি করার ফলে দর্শনা অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। কারণ আমদানি পণ্য সবই রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো নির্দিষ্ট রেলস্টেশনে গিয়ে খালাস হচ্ছে। সে কারণে এখানে যথেষ্ট শ্রমিককে কাজে লাগানো যাচ্ছে না এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে বেশি ট্রাক প্রয়োজন পড়ছে না।
তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে দর্শনা ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে। এখানে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা চালু হবে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক-লরি ভাড়া এবং বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। প্রতিদিন ভারত থেকে এক র্যাকের বেশি (৪২টি রেল ওয়াগন) এবং ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য দর্শনায় ঢুকলে প্রতিদিন সেগুলো খালাস করতে ২০০টি ট্রাক ও কয়েক শ’ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এর ফলে চুয়াডাঙ্গা জেলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। সেই সাথে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসে, সেগুলো খালাস করতে তিন দিন থেকে ১৮ দিন লাগে। এতে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে। এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে চাপ কমবে এবং আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।
দর্শনা ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন দফতর থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৮ ও ৯ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’ ১২তম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রেলওয়ে ওয়াগনে দর্শনা-গেদে রুটের মাধ্যমে মালামাল আমদানি-রফতানি করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট এবং ভারতের গেদে দিয়ে জনসাধারণ যাতায়াত করছেন। সভায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতের গেদে অংশের ৮০০ মিটার রাস্তা খুবই সরু। রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সাথে দর্শনার ২০০ মিটার রাস্তা প্রশস্থ করার বিষয়ে বলা হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সড়ক পথে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু ছিল। ইন্দো-চায়না ও ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে ওই স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আবার সেটির কার্যক্রম ১৯৭২ সালে চালু হয়। যেকোনো কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ওই স্টেশনটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চালু করার প্রস্তাব রাখলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেহেতু রাস্তা উন্নয়নের কারণে এখনই দর্শনা-গেদে দিয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। সে জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া হয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে রাজি ভারত। কিন্তু জীবননগরের দৌলৎগঞ্জে কোনো আবকাঠামো নেই, যেটা আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দর্শনার অবস্থান সুবিধাজনক।
দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার আব্দুল আলীম জানান, গত ২০১৮ সালের ৮ ও ৯ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’ ১২তম যৌথসভায় জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া হয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে রাজি হলেও আমদানি-রফতানির ব্যাপারে এটার বাস্তবরূপ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অর্থাৎ জীবননগরের দৌলৎগঞ্জে কোনো অবকাঠামো নেই, যেটা আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দর্শনার অবস্থান সুবিধাজনক। সেখানে ভারতের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০০ মিটার রাস্তা দ্রুত প্রশস্ত করা সম্ভব ও মালামাল সংরক্ষণের জায়গা এখানে বিদ্যমান।

 


আরো সংবাদ



premium cement