১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাঁচ বছর পর মুনাফা থেকে আবারো নিট লোকসানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান

শীর্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। লোকসানÑ ১০,২৭১ কোটি টাকা; এক বছরে ৪৬ প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসান দাঁড়াবে ৪,৩২৫ কোটি টাকা
-

আবারো লোকসানের ধারায় ফিরে এসেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। লাভ-লোকসান মিলিয়ে টানা পাঁচ বছর নিট মুনাফায় থাকার পর এখন আবার সেগুলো নিট লোকসানে উপনীত হয়েছে। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লাভ-লোকসান মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৬ প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসানের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ৩২৫ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লাভ-লোকসান মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। শুধু বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কারণে এবার লোকসান দেখা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ বছরে পিডিবি লোকসান গিয়ে ঠেকবে ১০ হাজার ২৭১ কোটি টাকায়।
সরকারের বাজেট ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইতঃপূর্বে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা নিট লোকসান দিয়েছিল। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে নিট মুনাফায় রয়েছে। ওই অর্থবছরে (২০১৩-১৪) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা হয়েছিল প্রায় তিন হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মোট নিট মুনাফা হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। ওই বছর নিট মুনাফা হয়েছিল ১০ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলতি অর্থবছরে মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়েছে। অর্থবছর শেষে এগুলোর মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বাড়ছে এক হাজার ৭০১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনকারী দু’য়েকটি প্রতিষ্ঠান লোকসান দেয়ার কারণে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৩টি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেÑ ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানও গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে পিডিবির লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার ২৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পিডিবির মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটি এবার ৯৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত লোকসান দিচ্ছে।
অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছর শেষে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন’ (বিএসএফআইসি)-এর লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা; (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৮৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা); ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর লোকসান দাঁড়াবে ৯১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৫৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা); ‘বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন’ (বিজেএমসি)-এর লোকসান দাঁড়াবে ৬৯৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৪৯৭ কোটি চার লাখ টাকা)। অন্যান্যের মধ্যে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন’ (বিআরটিসি)-এর লোকসান গত অর্থবছরের তুলনায় কমছে। চলতি অর্থবছর শেষে বিআরটিসির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা)। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার মতো দাঁড়াবে।
অন্য দিকে, চলতি অর্থবছরে মুনাফা কমে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছেÑ ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন’ (বিপিসি)। চলতি অর্থবছর শেষে বিপিসির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা); বিটিআরসির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে দুই হাজার ৫৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ছয় হাজার ২৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা); সিএএর মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৫৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৬৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা)।
এ ছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায় ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’ (আরইবি) ও ‘রাজউক’-এর মুনাফা এবার বাড়ছে। চলতি অর্থবছর শেষে আরইবির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৯২ কোটি ৩১ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা) এবং রাজউক-এর মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৪১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা)। এ দিকে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছরে সরকারকে প্রদেয় মোট লভ্যাংশের পরিমাণও কমে যাবে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট নিট মুনাফা প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে বলে ইতঃপূর্বে বছরের শুরুতেই অর্থ বিভাগের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল। ওই পূর্বাভাসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় না করার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিসি লোকসানে থাকবে বলে সংস্থাটি কোনো মুনাফা অর্জন করবে না। এ ছাড়া ভর্তুকি মূল্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে আমদানিকৃত এলএনজিও (প্রাকৃতিক তরল গ্যাস) বিক্রয় করা হবে। এ কারণেও লোকসানের পরিমাণ আগামীতে আরো বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী

সকল