২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

-

ধর্মীয় সহিংসতার দ্রুত নিন্দা জানাতে এবং চরমপন্থীদের জবাবদিহিতায় নিয়ে আসতে ভারতের নব পুননির্বাচিত মোদি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কূটনীতিক।
কংগ্রেসের হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্সের একটি উপকমিটির সামনে দেয়া বক্তব্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব অ্যালিস ওয়েলস বৃহস্পতিবার বলেন, তিনিও রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না কিনতে ভারতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের কর্মকাণ্ডে একটি বৈচিত্র্যময় ও সমন্বিত সমাজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরতেই থাকব আমরা।’ তিনি ভারতে বিদ্যমান ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য দৃঢ় সুরক্ষা প্রদান করে উল্লেখ করে ওয়েলস বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই ভারতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মের ভিত্তিতে সহিংসতার ঘটনার দ্রুত নিন্দা জানাবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে। এ ধরনের পদক্ষেপ ‘ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে আরো সহায়তা করবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে’।
তার মন্তব্য নিয়ে করা রিপোর্টে মার্কিন গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে যে ‘জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও কল্যাণ নীতির একটি শক্তিশালী মিশ্রণে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের আহ্বান করার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।
রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন একজন হিন্দু নারী বিজেপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন এবং পরে সমর্থন পেয়েছিলেন, যিনি একটি মুসলিম এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন; যে হামলায় ছয়জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক রিপোর্টে জানায়, হিন্দু জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থী গোষ্ঠী দ্বারা মুসলিম নাগরিকদের ওপর এমন হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, যা কখনো কখনো ক্ষমতাসীন বিজেপির সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল।
মানবাধিকার চর্চাসংক্রান্ত ২০১৯ সালের দেশভিত্তিক রিপোর্টে ভারতে ধর্ম ও বর্ণ ভিত্তিক সহিংসতাকে তুলে ধরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এতে উল্লেখ করা হয় যে, ‘মুসলমান ও নিম্ন বর্ণের দলিত দলগুলো সবচেয়ে বেশি অসহায়।’
বিভাগটি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি রিপোর্টে ২০১৮ সালের জানুয়ারি এবং জুনের মধ্যে দেশটিতে ৯৮টি ঘৃণাজনিত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। ২৭ জুলাই পর্যন্ত ২৪ জন মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে, যা ২০১৭ সালের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অনেকগুলো হত্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি শিশু অপহরণ বা গরু মারা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর জনতার মাঝে সহিংসতা দেখা দেয়ার পর ঘটে।
ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে ওয়েলস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য কোনো দেশ ছাড় দিচ্ছে না। সম্ভাব্য এস-৪০০ ক্রয় সম্পর্কে আমাদের গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে এবং আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্র সরবরাহকারীরা কিভাবে ভারতকে সাহায্য করতে পারব তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ দেশগুলোকে যথেষ্ট ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্ম তারা কিনবে। আমরা দিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছি, প্রতিরক্ষায় ভারতকে আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য করতে রাজি আছি, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আরো অনেক চুক্তি করতে রাজি আছি এবং ভারতের কাছে আরো সমরাস্ত্র বেচতেও রাজি আছি। কিন্তু দিল্লিকেও বুঝতে হবে, মার্কিন কংগ্রেস তাদের ‘প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী’র মর্যাদা দিয়ে কী আশা করছে তাদের কাছ থেকে। দিল্লি যদি রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা থেকে পিছু না হঠে, তাহলে আমাদেরও অন্য কথা ভাবতে হবে।’
ওয়েলস বলেন, গত ১০ বছরে ভারত তার অস্ত্রের উৎসগুলো বাড়াতে শুরু করেছে এবং গত ১৮ বছরে মার্কিন-ভারত প্রতিরক্ষা বাণিজ্য শূন্য থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এখনো ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগই রাশিয়া থেকে সংগৃহীত হয়। ২০১৫ সালে ভারত প্রথম রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরকালে এস-৪০০ ব্যবস্থা সরবরাহের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement