১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যানজটে অচল রাজধানী অসহায় মানুষ

রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট। ছবিটি গতকাল দুপুরে মতিঝিল এলাকা থেকে তোলা :নয়া দিগন্ত -

যানজটে অচল রাজধানী। অসহায় মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে মাইলের পর মাইল হাঁটা। এর মধ্যে কোথাও কোথাও গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট। গতকাল এই ছিল রাজধানীর পরিস্থিতি। ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ বলেছে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে যানজট ততই বাড়ছে। ঈদের আগে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
দুপুর ১২টা। গুলিস্তান বঙ্গভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণার থেকে শুরু। আর সেই গাড়ির লাইন গিয়ে ঠেকেছে মতিঝিল শাপলা চত্বর। আবার দৈনিক বাংলা মোড় থেকে যানজট শুরু হয়ে ঠেকেছে গিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত। রাস্তার উভয় পাশ থমকে আছে। দুপুর ১২টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। ইফতারির ঠিক আগ মুহূর্তে রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা হলেও যানজট কমেনি। সন্ধ্যার পর সেই যানজট আবারো তীব্র হয়ে ওঠে। রাজধানীর কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশকেই অসহায় দেখা যায়। ৫টার দিকে হাজার হাজার মানুষকে গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে।
রোজার শুরু থেকেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। গতকাল তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়। সময় যত বাড়তে থাকে যানজটও তত বেড়ে যায়। সকাল ১০টার পর থেকেই যানজট অসহীয় রূপ নেয়। আর ১২টার পর থেকেই কোনো কোনো এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, পুরো মিরপুর রোড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট, নাবিস্ক থেকে তেজগাঁও সাত রাস্তা ও মহাখালী থেকে ফার্মগেট, কাকলী থেকে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তাঘাটই গতকাল অবরুদ্ধ ছিল। পুরান ঢাকার অলিগলি পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। এমন অনেক এলাকা ছিল যেখানে রাস্তাঘাটে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেলা ২টার পর রাজধানীর প্রতিটি রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর সিগন্যালে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশও নিরুপায় দাঁড়িয়ে আছে।
যানজটের কারণে রোজাদারদের অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় রাস্তায় নেমে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যে চিত্র দেখা যায় তাতে মনে হয়েছে রাস্তার ওপর অবৈধ পার্কিংয়ের কারণেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দু’পাশজুড়ে দেখা যায় শত শত গাড়ি পার্কিং করা। বড় বড় ভবনেরও কোনো পার্কিং না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ভবনের সামনে গাড়ি রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা যায় কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যস্ত মার্কেট থাকলেও ওইসব মার্কেটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পার্কিং ব্যবস্থা নেই। মার্কেটগুলোতে আসা ক্রেতারা বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে মার্কেটে ঢুকছেন। বাংলামোটর লিংক রোডের তিনের দুইভাগই দখল করে আছে পার্কিং করা গাড়ি। ফলে এটুকু রাস্তায় যে জট সৃষ্টি হয় তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো এলাকার রাস্তা পুরোটাই দখল করে পার্কিং বানানো হয়েছে। বিশেষ করে ওইসব পার্কিংয়ে সরকারি যানবাহনই দেখা যায়। সচিবালয় এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাঝের রাস্তাটি পুরো পার্কিংয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল ছুটির দিনে অবশ্য এই রাস্তায় কোনো গাড়ি থামানো দেখা যায়নি। রাস্তার পাশে যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তার আকৃতি ছোট হয়ে যায়। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা আটকে ব্যবসা করা হচ্ছে। ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তায়ও এখন হকার বসেছে কোনো কোনো এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তার ওপর ইফতারসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তা দখল করে এভাবে ব্যবসা চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেখেও না দেখার ভান করছে।
বাংলাদেশ বিপ্লবী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই রাস্তাঘাট দখল করে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন রাস্তার ওপর রেখে দেয়া হয়। সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ কি?
মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যানজট নিরসনে মহানগর পুলিশ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement