২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুজনের আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণœ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান করায়ত্ত

মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সুজনের গোলটেবিল বৈঠক : নয়া দিগন্ত -

রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে করায়ত্ত করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। আজকে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও ¯পষ্ট করে বলতে পারি না, নানা ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। আলোচকরা বলেন, রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অধিকারগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হচ্ছে, মানুষ গুম-খুনের শিকার হচ্ছে। আর সভার আয়োজক সুজনের পক্ষ থেকে ১৮ দফা সুপারিশ জানিয়েছে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের উদ্যোগে গতকাল ‘রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনায় দেশের বিশিষ্টজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন, ‘সুজন’ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য ড. সি আর আবরার, রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘সুজন’-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
সুজনের সুপারিশে বলা হয়, সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো হতে পারে যেমন : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য সৃষ্টি, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ ও সরাসরি নির্বাচন, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি বড় আকারের ‘ইলেকট্ররাল কলেজ’ গঠন, সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, টার্ম লিমিটের বিধান প্রবর্তন ইত্যাদি। এ ছাড়া, সংসদকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার, যাতে এটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণসহ নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সংসদকে কার্যকর করার জন্য অনেকগুলো বিষয় স¤পর্কে ভাবা দরকার। দরকার সংসদীয় কমিটিগুলো সংসদের প্রাণকেন্দ্র, তাই এগুলোকে সক্রিয় ও কার্যকর করা। পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনবিচার বিভাগের সত্যিকারের পৃথকীকরণ এবং আইনের শাসন কায়েম করা। এর জন্য প্রযোজন হবে ধ্বংসপ্রায় ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে কার্যকর করা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগের রাতে যাতে কেউ ভোট না দিতে পারে সেজন্য ভোট সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হওয়া দরকার। আর ভোটের দিন সকালেই ব্যালট বক্স কেন্দ্রে পাঠানো দরকার। তিনি বলেন, উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আমরা ক্রমেই সঙ্কুচিত করে ফেলছি। এর ফলে সংক্রামকের মতো উগ্রবাদের উত্থান ঘটতে পারে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে করায়ত্ত করে ফেলা হচ্ছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা মনে করি আইন-কানুন সঠিকভাবে কাজ করলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের পর্যালোচনা করে দেখা দরকার, আইন-কানুন সঠিকভাবে প্রণয়ন হচ্ছে কি-না, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর কি-না এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে কি না। তিনি বলেন, আমাদের শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। তাই শাসনব্যবস্থা ঠিক করা তথা রাষ্ট্রকে মেরামতের জন্য আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সদিচ্ছা প্রদর্শন করবেন, যাতে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়।
ড. হামিদা হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের সময়েও আমরা অনেকটা স্বাধীনভাবে লিখেছি। এরশাদের সময়ে আমরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছি। অথচ আজকে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও ¯পষ্ট করে বলতে পারি না। নানান ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। সুদক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। জনগণকে ক্ষমতাহীন করে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, মানুষ রাস্তায় নামছে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কী জনগণের দাবিগুলোকে সামনে নিয়ে মানুষকে সংগঠিত করে তুলতে পারছে?
ড. সি আর আবরার বলেন, আমাদের অধিকারগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হচ্ছে, মানুষ গুম-খুনের শিকার হচ্ছে। আজকে নির্বাচন কমিশন ভোটাধিকার নির্বাসন কমিশনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ শুধুমাত্র জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরোধিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অবাক করা বিষয় হলো, আজকে আমরা এসবের প্রতিবাদও দেখছি না। আমি মনে করি, এই ভীতি ও হতাশার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে তুলতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement