২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আউটসোর্সিংয়ে নতুন আয়করদাতা খুঁজে বের করার পরিকল্পনা

সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করার টার্গেট
-

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয়কর আদায় বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য নিয়োগ দেয়া হবে প্রায় ১০ হাজার জনবল। সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এই জনবলের সবাই হবেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী। তাদের কাজ হবে আয়কর আদায়যোগ্য মানুষ খুঁজে বের করা। অনেকটা খানা জরিপের মতো তারা বিভিন্ন বাড়ি ও ফ্ল্যাটে গিয়ে পরিবারভিত্তিক সদস্যের আয়ের উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। পরে এই উপাত্তগুলো আয়কর অফিসে জমা দেয়া হবে। এর ওপর ভিত্তি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্ভাব্য আয়করদাতার সন্ধান পাবে এবং তাদেরকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আগামী অর্থবছর থেকে এভাবে নতুন আয়করদাতা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, সরকার আগামী অর্থবছরে বর্তমান ২২ লাখ আয়করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে এক কোটিতে উত্তীর্ণ করতে চায়।
সূত্র জানায়, নতুন জরিপের মাধ্যমে শুধু ঢাকা শহর থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ নতুন আয়করদাতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। এর বাইরে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আরো ৬০ লাখ সম্ভাব্য করদাতা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য জেলা ছাড়াও স্থাপন করা হবে উপজেলাভিত্তিক কর অফিস। এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে নতুন করে এক কোটি মানুষকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মন্ত্রীর এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। নতুন আয়করদাতা কিভাবে সংগ্রহ করা হবে তা বাজেট বক্তৃতায় বিস্তারিত দেয়া থাকবে। আমরা মনে করছি, শুধু ঢাকা শহরেই ৫০ লাখ মানুষ আয়কর দেয়ার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু নানা কারণেই তারা কোনো আয়কর দেন না। এখন আমাদের এসব মানুষ খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য চালানো হবে জরিপ। এতে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের কাজে লাগাবো। তিনি বলেন, এসব নতুন করদাতার অর্ধেকও যদি ন্যূনতম আয়কর প্রদান করেন তবে আয়কর আদায়ে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে।
জানা গেছে, দেশের যেসব এলাকায় বিত্তশালী মানুষ বসবাস করেন সেসব এলাকায় প্রথমে জরিপ কাজ শুরু করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার ক্ষেত্রে বেছে নেয়া, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, লালমাটিয়া, পুরান ঢাকার ওয়ারী, সেগুন বাগিচা, পল্টন, ইস্কাটন, বনশ্রী প্রভৃতি এলাকা। একইভাবে, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর অঞ্চলেরও বিভিন্ন এলাকা আয়কর জরিপের আওতায় আসবে। জরিপকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের রোজগেরে সদস্যদের একটি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে একটি ফরম পূরণ করে নিয়ে আসবেন। পরে তা সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিসে জমা দেবেন। এই জরিপের ভিত্তিতে আয়কর অফিস থেকে পরে সম্ভাব্য আয়কর দিতে পারেন এমন মানুষদের সাথে যোগাযোগ করা হবে এবং তাদের বলা হবেÑ তাদের বার্ষিক আয়করের আওতায় চলে এসেছে। এ অবস্থায় তারা যেন কর রিটার্ন দাখিল করেন।
এ দিকে আগামী অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ২২ লাখ থেকে এক কোটিতে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজস্ব জনবল নেই বিধায় বিপুল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করা হবে।
গত বুধবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ও বর্তমান গভর্নর এবং অর্থনীতিবিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ইফতার অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু অনেক কঠিন কাজে নামছি। ২০ লাখ, ২২ লাখ থেকে প্রথম বছরে করদাতা সংখ্যা আমরা এক কোটি করতে চাই। এই যে করদাতা বাড়াব, কাকে বাড়াব? যারা কর প্রদানে উপযুক্ত তাদেরই করের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে চার কোটি মানুষ আছে, যারা আয়কর দেয়ার উপযুক্ত। আওতা বাড়িয়ে এসব মানুষকে যদি করের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত অনেক বেড়ে যাবে। আমরা সে দিকে যাচ্ছি।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক আউটসোর্স করা হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারণ রাজস্ব আদায়ে যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন সে পরিমাণ এত অল্প সময়ে পাওয়া যাবে না। তাই আউটসোর্সের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হবে। পাশাপাশি রাজস্ব অফিস প্রতিটি উপজেলায় যাবে। যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে একই উপজেলায় তিন থেকে চারটি রাজস্ব অফিস দেয়া হবে। চাহিদার ওপর অফিসের সংখ্যা নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহজ করে করের আওতা বাড়ানো এবং সেখান থেকে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো। এ কাজটি করব। অদূর ভবিষ্যতে সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম প্রধান খাত হবে আয়কর। এ খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায় হবে। এর আগে গত বছর এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সিপিডির এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আয়কর আহরণ বাড়াতে এনবিআর বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে বাড়ির মালিক ও ফ্ল্যাটের মালিকদের ওপর জরিপ চালানো হবে। একই ধরনের জরিপ চালানো হবে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলা শহরগুলোতে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কর দেয়ার যোগ্য তাদেরও করের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশ আসে এনবিআর খাত থেকে। বাকি ৩৬ শতাংশ এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে। এনবিআর খাতের মধ্যে এখন পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আয় হয় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়কর খাত। তৃতীয় অবস্থানে সম্পূরক শুল্ক এবং চতুর্থ অবস্থানে আমদানি শুল্ক। আগে আমদানি শুল্ক থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হতো।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বিয়ের বাজার শেষে বাড়ি ফেরা হলো না চাচা-ভাতিজির প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় ৩ সংস্থার মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান সাবেক শিবির নেতা সুমনের পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের শোক গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আলোচনায় নেতাদের ভাই-বোন ও সন্তান সংখ্যা চীনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ ভারতের মাঝারি পাল্লার নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ৩ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার চেন্নাইকে হারাল লক্ষৌ ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হিজবুল্লাহর যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী : ১ মেক্সিকো, ২ ভারত

সকল