২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

  ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ মহাসড়কে চালকদের জন্য দ্বিতল বিশ্রামাগার

-

দেশের প্রধান চারটি মহাসড়কে দূরপাল্লার ট্রাক বা লরি চালকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত দ্বিতল বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। সার্বিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্যই এই প্রকল্প। প্রতিটি বিশ্রামাগার নির্মাণে ব্যয় হবে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে একটি করে এই বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ট্রাক ও লরি চালকেরা তাদের যাত্রা পথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাবে। এতে করে বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার হার কমে আসবে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) আওতাধীন সর্বমোট সড়কের পরিমাণ ২১ হাজার ৩০২ দশমিক ০৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৮১২ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ২৪৬ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার এবং জেলা সড়কের পরিমাণ ১৩ হাজার ২৪২ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার। সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির টার্গেট অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও হতাহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর সরকারেরও লক্ষ্যমাত্রা হলো এই সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনা।
বাংলাদেশে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কিছু জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত ২০১৮ সালের ২৫ জুনের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তটি হলো- কোনো চালক কর্তৃক একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি চালনা না করা এবং দূরপাল্লার যানবাহনে বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা রাখা। এদিকে দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী বাসচালকদের ও যাত্রীদের স্বল্প বিরতি নেয়ার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ট্রাক চালকদের সে ধরনের কোনো বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ট্রাক চালকেরা অনেক সময় সড়কের পার্শ্বে ট্রাক থামিয়ে বিশ্রাম নেয়। যা পক্ষান্তরে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। অনেক সময় দ্রুত বিশ্রাম নেয়ার জন্য বিপদজ্জনক গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। যার কারণেই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৭৮তম কিলোমিটার এলাকা কুমিল্লার নিমসার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১২৮তম কিলোমিটার এলাকা হবিগঞ্জের জগদীশপুর, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের পাঁচিলা এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ৭৪তম কিলোমিটার এলাকা মাগুরার লক্ষ্মীকান্দর নামক স্থানে এই বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সওজ এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করেছে। কুমিল্লা ও সিরাজগঞ্জ উভয় স্থানে অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব সাড়ে ১২ একর জমিতে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। হবিগঞ্জ ও মাগুরাতে যথাক্রম ৬.৯০ একর ও ৬.৮০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সওজ এবং জাতীয় মহাসড়কে বুয়েটসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা ২০৯টি ব্লাকস্পট চিহ্নিহ্নত করে। যার মধ্যে সওজের অন্যান্য প্রকল্পে কিছু স্পট অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাকি ১৪৪টি ব্ল্যাকস্পট উন্নয়নের জন্য ২০১৪ সালে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। পরে ২৩টি স্পট অন্য প্রকল্পে বাস্তবায়নাধীন থাকায় ১২১টি স্পট উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। যার ব্যয় ধরা হয় ১৮১ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। এসব ব্ল্যাকস্পটও সড়ক দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ।
মহাসড়ক বিভাগ সূত্র বলছে, ট্রাক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম, বেপরোয়া গতিতে চালনা না করা, ঘুমানো, চালক পরিবর্তন এবং যানবাহনের বিভিন্ন যান্ত্রিক সমস্যাগুলো দূরীকরণের জন্য মহাসড়কের পাশে এই বিশ্রামাগার জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করা প্রয়োজন। এসব বিশ্রামাগারে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা, চালকদের রাতযাপনের ব্যবস্থা, বিনোদনের জন্য টিভি, ওয়াশরুম, চা বা কফিসহ পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যা চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার মাধ্যমে স্বস্তিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করবে।


আরো সংবাদ



premium cement