২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানো মোবাইল টাওয়ার অপসারণে সমীক্ষা প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট

স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠনসহ ১১ দফা নির্দেশনা
-

মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর বিষয়ে সমীক্ষা করে চার মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মোবাইল টাওয়ারে বিকিরণমাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১০ ভাগের এক ভাগ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারাগার, খেলার মাঠ ও জনবসতিপূর্ণ ও প্রতœতাত্তিক এলাকা থেকে ক্ষতিকর বিকিরণ ছড়ানো টাওয়ার সরানো, বিটিআরসির স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করাসহ ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, রিট আবেদনটি চলমান থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো: ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের ১১ দফা নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছেÑ তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা যাতে বেশি না হয় তার ব্যাপারে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ। টাওয়ারে বিকিরণের মাত্রা বিটিআরসি এবং লাইসেন্সি দু’জনকে স্বাধীনভাবে আইটিইউ এবং আইইসি-এর মান অনুসারে পরিমাপ করা। কোনো টাওয়ারে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেশি হলে অপসারণ করে নতুন টাওয়ার বসানো। টাওয়ার ভেরিফিকেশন মনিটর পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিটিআরসির দায়-দায়িত্ব হবে বাধ্যতামূলক। বিটিআরসি স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করবে। বিটিআরসিকে অন্যদেরকে নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করবে। মোবইল সেটে দৃশ্যমানভাবে এসএআর মান লিখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সি প্রতিটি রিপোর্ট বা রেকর্ড পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) রিট আবেদনটি দায়ের করেছিল। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।
এর আগে ২০১৭ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্টে দাখিল করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়তা)-এর মাত্রা উচ্চপর্যায়ের। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি টাওয়ার স্থাপন ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে। পরে বিটিআরসি একটি নীতিমালা আদালতে জমা দেয়।
২০১২ সালে এইচআরপিবি রিট দায়ের করলে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই সময় হাইকোর্ট বিকিরণের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কয়েকটি মোবাইল ফোন টাওয়ার পরিদর্শন করে রেডিয়েশন বিষয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন।
এ ছাড়াও সাত দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কমিটিতে বিজ্ঞানী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ কমিটিকে মোবাইল টাওয়ার থেকে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ২০১৭ সালের ৮ মার্চ নীতিমালা ও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে দাখিল করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে নীতিমালা প্রণয়নের আগে একটি সমীক্ষা করা প্রয়োজন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে এরসাথে জনস্বার্থ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পৃক্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement