২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি হচ্ছে

দেয়া হবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ
-

এবার সবচেয়ে খারাপ খেলাপি ঋণ আদায়ের ভার দেয়া হচ্ছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে। যেসব খেলাপি ঋণ ব্যাংক আদায় করতে ব্যর্থ হবে কেবল সে কুঋণই বেসরকারি খাতে গড়ে তোলা এ কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হবে। যদি এ কোম্পানি খেলাপি ঋণ আদায় করতে সমর্থ হয় তবে আদায়কৃত ঋণের অর্থের ২০, ৩০ এমনকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দিয়ে দেয়া হবে কোম্পানিকে। এ জন্য করা হবে নতুন একটি আইন। যার নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, ‘সিকিউরিজেশন অব নন পারফরমিং লোন’। এই আইন বলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণ খেলাপির প্রতিষ্ঠান দখলে নিতে পারবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংক্রান্ত একটি কমিটিতে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবলোপনকৃত ঋণ ধরলে তা দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ভারত, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াকে। এসব দেশে কিভাবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হচ্ছে তা পর্যালোচনা করে সেই আদলে গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির গঠন প্রক্রিয়া।
খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রস্তাবিত কোম্পানির কাজ কী হবেÑ তা জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংক যে খেলাপি ঋণগুলো আদায়ে ব্যর্থ হয় সেগুলোর হিসাব কোম্পানির কাছে ট্রান্সফার করে দেবে। আর এ ঋণগুলো আদায়ে ব্যবস্থা নেবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের কোম্পানিই খেলাপি ঋণ আদায়ে কাজ করতে পারবে। তবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত হতে হবে।
অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়ার জন্য একটি পৃথক আইন করার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। আইনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সিকিউরিজেশন অব নন পারফরমিং লোন’। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, কোম্পানি যদি মনে করে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করলে তা আবার সচল হবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তা হলে তা করতে পারবে। পাশাপাশি এই কোম্পানিকে ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আইনের মাধ্যমে এসব ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। প্রস্তাবিত আইনটিতে ব্যাংকগুলোকেও বিশেষ ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ম্যাজিস্ট্রেটের সাহায্য নিয়ে ঋণখেলাপির প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে নিতে পারবে ব্যাংক।
এর আগে গত ১৪ মার্চ এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সাথে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ ধরনের কোম্পানি গঠনের কথা প্রথম বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেসরকারিভাবে পরিচালনা করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা খেলাপি ঋণ আদায় করে যাবো। যেগুলো স্বাভাবিকভাবে আদায় করা যাবে না, সেগুলো আদায় করার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এ কোম্পানি কোনো শক্তি খাটিয়ে নয়, নিয়মকানুনের মধ্যে থেকেই ঋণ আদায় করবে।
এরপরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কোম্পানি গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মু. শুকুর আলীকে। অপর দুই সদস্য হলেন একই বিভাগের উপসচিব সাঈদ কুতুব এবং অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিছুর রহমান। কমিটির কার্যপত্রে পাঁচটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের প্রয়োজনীয়তা, গঠন প্রক্রিয়া, সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা (যদি থাকে) এবং এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের রীতিনীতি পর্যালোচনা করা। কমিটিকে সুপারিশসহ ৩১ মার্চের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশে এ ধরনের কোম্পানি গঠন এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০০১ সালেও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস করপোরেশন (পিডিএসসি) লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম শুরু করে। পরে এ জাতীয় আরো কোম্পানি গড়ে ওঠে এবং সোনালী, অগ্রণীসহ কয়েকটি ব্যাংক তাদেরকে খেলাপি ঋণ আদায়ের দায়িত্ব দেয়। শুরুর দিকে এ ক্ষেত্রে কিছু সফলতা আসলেও পরবর্তীতে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির কারণে তা প্রায় ব্যর্থ হয়ে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement