১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্র অপহরণ হার মানিয়েছে নাটক সিনেমাকে

ছোট ভাইকে অপহরণ করে বাবার কাছে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি; অপহরণের জন্য ভাড়া করা হয় দুইজনকে; মুক্তিপণ না পেলে ভাইকে খুন করার পরিকল্পনা; স্কুলছাত্র উদ্ধার, বড় ভাইসহ গ্রেফতার ৩
নারায়ণগঞ্জে আটক অপহরণকারী; ইনসেটে উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্র ফাহাদ জামিল : নয়া দিগন্ত -

‘৬০ লাখ টাকা দিবি নয়তো তোর ছেলেকে আর ফিরে পাবি না। আর হ্যাঁ পুলিশের কাছে গেলে তোর ছেলের লাশ পাবি। রাত ৯টার মধ্যে আমরা যেখানে আসতে বলবো ঠিক সেখানেই টাকা নিয়ে আসবি। সময় বেশি দেয়া যাবে না। যা করার তাড়াতাড়ি কর। ছেলে চাস? নাকি লাশ চাস। তোরাই ঠিক কর।’ গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় অজ্ঞাত ফোন নাম্বার থেকে এরকম হুমকি পেয়ে রীতিমতো ঘাবড়ে যান নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া ভুঁইয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন ও তার স্ত্রী।
মনির হোসেন জানান, তার ছোট ছেলে, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ফাহাদ জামিল প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে না আসায় তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে অজ্ঞাত ফোন থেকে তাদের জানানো হয়। ফাহাদ জামিলকে অপহরণ করা হয়েছে। ৬০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। না দিলে লাশ বাড়িতে পাঠানো হবে। অপহরণকারীদের হুমকির পর আতঙ্ক দেখা দেয় ব্যবসায়ী মনিরের পরিবারে। হুমকির পরপরই রাতে ফাহাদের বড় ভাই মাছুম জামিল নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
থানার পুলিশ র্যাবের সহায়তা নিয়ে স্কুলছাত্র ফাহাদ জামিলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয় তারা ফতুল্লার লালপুরে। সেখানে অভিযান চালায় র্যাব পুলিশের একটি যৌথ দল। অপহরণকারীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে। সেখান থেকে স্কুলছাত্র ফাহাদ জামিলকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তারা তিনজনকে গ্রেফতার করে।
র্যাব পুলিশের অভিযানের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। যা অনেক নাটক সিনেমাকেও হার মানায়। মূলত স্কুলছাত্র ফাহাদ জামিলকে অপহরণ করেছে তার বড় ভাই মারুফ জামিল। বাবা মনির হোসেনের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভাইকে অপহরণের জন্য ভাড়া করে দুই অপহরণকারীকে। এরা হলো মারুফের সহযোগী সোহান (২৬) ও জিসান (৩০)। পুলিশ তিনজনকেই গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।
আপন ছোট ভাই অপহরণচক্রের হোতা মারুফ জামিল অকপটে স্বীকার করে, ব্যবসার পুঁজি বাড়াতে ছোট ভাই ফাহাদ জামিলকে নিয়ে যাই এবং আবার বাবার কাছে টাকা চাই। আমি বুঝতে পারিনি ঘটনাটি এত বড় আকার ধারণ করবে। এভাবেই নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় বাবা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনদের সামনে অপহরণের সব বর্ণনা দেয় মারুফ জামিল।
আটককৃত অপর অপহরণকারী জিসান ওরফে মহসিন এবং সোহান শেখ একইভাবে স্বীকার করে তাদেরকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মারুফ জামিল তার ভাই ফাহাদ জামিলকে অপহরণ করতে সব চক্রান্ত করে। টাকা না পেলে ছোট ভাইকে হত্যা করে মুন্সীগঞ্জের নদীতে ফেলে দেয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। এরই মধ্যে পুলিশ ও র্যাব তাদেরকে আটক করে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, স্কুলছাত্র ফাহাদ জামিলকে অপহরণ করে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণের অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযানে নেমে পড়ি। জানা যায়, অপহরণের পর ফাহাদকেসহ অপহরণকারীরা প্রথমে ফতুল্লার লালপুর ও পরে মুন্সীগঞ্জ এলাকাতে যায়। পরবর্তীতে র্যাবের সহায়তায় মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের সামনে থেকে অপহৃত ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়।
চাঞ্চল্যকর অপরহণের এ ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দারোগা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি লোমহর্ষক। এ বিষয়ে আরো তথ্য উদঘাটনের জন্য আপন ভাইয়ের অপহরণকারী বড় ভাই মারুফ জামিল (৩০), সহযোগী সোহান (২৬) ও জিসান ওরফে মহসিনকে (৩০) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ভিকটিম ছোট ভাই ফাহাদ জামিলকে ২২ দারায় জবানবন্দী প্রদানের লক্ষ্যে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement