১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চট্টগ্রাম সফর

-

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের চার দিনের চট্টগ্রাম সফরের গতকাল ছিল শেষ দিন। গত ১৬ থেকে গতকাল ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম সফর করেন।
দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিঞ্জপ্তিতে গতকাল বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা ছিল তার এ সফরের উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদূত মিলার যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানি ‘এক্সিলারেট’ পরিদর্শন করেন। বঙ্গোপসাগরে নির্মিত ‘এক্সিলারেট’ এর ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) চট্টগ্রামের ৬০ লাখ অধিবাসী ও এর সমগ্র শিল্প এলাকার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করছে। এফএসআরইউ প্রতিদিন ৫০ কোটি কিউবিক ফুট গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশন করতে সক্ষম। এর ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার স্থানীয় শিল্প সম্পর্কে আরো জানতে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসব শিল্প বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন এবং দেশের ৯০ শতাংশের বেশি বাণিজ্য পরিচালিত হওয়া বন্দরটির সেবাগুলো ঘুরে দেখেন। তারা বন্দরের উন্নয়ন ও অন্যান্য নির্মাণকাজে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত একটি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড ও একটি স্টিল রিরোলিং মিলও পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শ্রমিক অধিকার ও তাদের নিরাপত্তার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন এবং শ্রমিক ও পরিবেশের সুরক্ষা দান এবং শিশু শ্রমের অবসান ঘটানোর জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ড্রাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ (এসডব্লিউএডিএস) মহড়ার সমাপনী অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক সমর্থনে বক্তব্য দেন। এ মহড়ার মধ্যে ছিল মানবাধিকার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও মিশন পরিকল্পনা বিষয়ক মডিউল।
রাষ্ট্রদূত মিলার ২০০৫ সালে জাতিসঙ্ঘের শান্তি রক্ষা অপারেশনে নিহত সীম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সমাধিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন। তিনি জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে নিহত ১৪৬ জন বাংলাদেশীর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় মিশনে প্রদত্ত সেনাসংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার এ ছাড়াও চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউ) স্থাপিত ‘আমেরিকান কর্নার’ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দুইবারের ফুলব্রাইট ফেলো সিআইইউর ভিসি ড. মাহফুজুল হক চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের সাথে অংশ নেন। রাষ্ট্রদূত মিলার যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগসুবিধা এবং ‘আমেরিকান কর্নার’ এ প্রদত্ত এডুকেশন ইউএসএ তথ্য ও সেবাগুলো তুলে ধরেন। পরে তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা ও ভিসির সাথে দেখা করেন এবং রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীসহ নারীদের শিক্ষা ও নেতৃত্বের দক্ষতার উন্নয়নে অবদানের জন্য তাদের সাধুবাদ জানান।
রাষ্ট্রদূত মিলার চট্টগ্রাম সফরকালে ওয়ার সিমেটরি পরিদর্শন করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্য হিসেবে লড়াইয়ের সময় নিহত আমেরিকান পাইলট উইলিয়াম বি. রাইসের সমাধিতে পুুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিনি ওই যুদ্ধে নিহত সবার আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে ‘ক্রস অব রিমেমব্রান্স’ এ পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement