২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাফনির্ভর জেলেদের মানবেতর জীবনযাপন

দেড় বছর ধরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ; বিজিপির হাতে আটক ৪ জেলে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছে
টেকনাফে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অলস পড়ে আছে জেলেদের নৌকা :নয়া দিগন্ত -

না-ফ নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে বিজিপির হাতে আটক জেলেরা মুক্তিপণ দিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন মঙ্গলবার সকালে ট্রলারসহ অপহৃত হন চার বাংলাদেশী জেলে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় ট্রলারসহ তারা সাবরাং ইউপির শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া এলাকায় এসে পৌঁছান।
অপহৃত জেলেরা মুক্তিপণের মাধ্যমে ফেরত এসেছেন বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে। তবে ট্রলার মালিকপক্ষ টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি।
ট্রলার মালিক শাহপরীরদ্বীপ বাজারপাড়ার আমান উল্লাহ বলেন, জেলেরা ফেরত এসেছে বলে শুনেছি। তাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিভাবে তারা ফেরত এসেছেন তাও জানি না।
অপহৃতদের মধ্যে ছিলেনÑ শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার আজিম উল্লাহ মাঝি, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবুল কালাম ও মোহাম্মদ হাসান। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ হাসান পুরনো রোহিঙ্গা বলে জানা গেছে। তারা দালালের মাধ্যমে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসেন।
গত ১৬ এপ্রিল সকালে নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকাররত অবস্থায় মিয়ানমার থেকে স্পিডবোটে বিজিপির একটি দল এসে অস্ত্রের মুখে তাদের ধরে নিয়ে যায়।
এই ব্যাপারে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সাল হাসান খান বলেন, অপহরণের বিষয়টি জানার পর ওপারে যোগাযোগ করেছি। তারা স্বীকার করেনি। মুক্তিপণের বিনিময়ে গোপনে জেলে ফিরে আসার বিষয় জানতে চাইলে এই ব্যাপারে তিনি অবগত নন বলে জানান।
এ দিকে নাফ নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপনে যাওয়ার কারণে বিজিবি কঠোর অবস্থানে থাকায় ফিরে আসা জেলেরা আটক আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
সম্প্রতি নদীতে ইলিশের আনাগোনা নজরেপড়ায় লোভ সামলাতে না পেরে অভাবে থাকা জেলেরা গোপনে নদীতে মাছ শিকারে নামছেন। এই সুযোগে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী জেলেদের আটক ও মুক্তিপণ বাণিজ্য করে সীমান্তের স্বাভাবিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
টেকনাফে জেলে পেশার মুখোশধারী কিছু মাদক ব্যবসায়ীর কারণে নাফ নদীতে দেড় বছর ধরে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। বেকার হয়ে পড়া প্রায় দেড় হাজার জেলে পরিবারে অভাব-অনটন এখন নিত্যসঙ্গী। অভাবে এক জেলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতহত্যা করলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কারো সুদৃষ্টি না পড়ায় তারা মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন রমজান মাসে তারা আরো বিপাকে পড়বে। বাংলাদেশ সরকার ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নাফ নদীতে স্থানীয় জেলেদের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে। তখন থেকে নাফ নদীনির্ভর নিবন্ধিত এক হাজার ১৪১ জন জেলে এবং অনিবন্ধিত আরো প্রায় তিন শতাধিকসহ প্রায় দেড় হাজার জেলে বেকার হয়ে পপ্রণ। তাদের সংসারে চরম অভাব নেমে এলেও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কৌশলে মাদকের চালান এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। বর্তমানে টেকনাফে পুলিশ-বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী কঠোর ভূমিকার ফলে এখন মাদক চোরাচালান প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বেকার হয়ে পড়া জেলেরা রাতে না হলেও দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় মাছ শিকারের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব জেলে পরিবার মঙ্গাক্রান্ত পরিবেশে বসবাস করছে বলে অনেকের দাবি। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি অথবা ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারে রেশন চালুর দাবিসহ বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করলেও কারো সাড়া না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ২০ কেজি করে দুই দফায় ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। অবশিষ্ট জেলেরা কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপে দুই সন্তানের জনক জেলে মো: রফিক ওরফে সোনা মিয়া গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। নাফ নদীনির্ভর এসব জেলের করুণ দশায় নিরুপায় হয়ে এমপি শাহীন চৌধুরী বিশেষ ব্যবস্থায় মাছ শিকারের অনুমতি দানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে হোয়াইক্যং মডেল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছে। মাদকের অপতৎপরতা তুলনামূলক কমলেও সাধারণ জেলেদের ভোগান্তি কমেনি। রমজান উপলক্ষে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নাফ নদীনির্ভর জেলেদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রবিউল হাসান বলেন, জেলেদের অভাব-অভিযোগের বিষয়টি চিন্তা করে ইতোমধ্যে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়েছি। তিনিও বিশেষ প্রক্রিয়ায় জেলেদের মাছ শিকারে সুযোগ দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement