২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাসিক চুক্তিতে অনেক আসামি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন

মানিকগঞ্জ কারা অভ্যন্তরের হালচাল
-

মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক বন্দীদের মধ্যে অনেকেই ভালো থাকা-খাওয়ার জন্য মাসিক চুক্তি করছেন। এতে একজন বন্দীর পেছনে স্বজনদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার কেউ যদি হাসপাতালে রোগী সেজে আরাম আয়াশে সুযোগ সুবিধায় থাকতে চান, তাহলে তার মাসে খরচ হচ্ছে গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা। আর সাধারণ সেলে যারা থাকছেন তাদের কাছ থেকে রাইটাররা ‘মারধর’ করে, যা আদায় করতে পারছে তাই নেয়। মোটকথা কারাগারে শুধু টাকার খেলা। যারা ম্যাট, রাইটারদের চাহিদা মেটাতে পারছে না, তাদের এক কাতে রাত কাটানোসহ পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর প্রতিদিন কারাগার থেকে সকালের নাশতাসহ তিন বেলার যে খাবার দেয়া হচ্ছে তার বেশির ভাগ নি¤œমানের।
সম্প্রতি জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে একটি নাশকতার মামলায় ২৪ দিন জেলখেটে জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামি লোকমান কাজী (৩৫) নয়া দিগন্তের কাছে এভাবেই মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে চলতে থাকা অনিয়ম দুর্নীতির কথাগুলো অকপটে বলে ফেলেন। একই সাথে তিনি দাবি করেন, তাকে যে মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল সেটিও মিথ্যা সাজানো!
গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (বুধবার) মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কারাবন্দীদের সাথে স্বজনেরা নির্ধারিত স্লিপ কেটে দেখা করছেন। সকালের দিকে চাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে স্বজনদের চাপও বাড়তে থাকে। কারাগারের মূল ফটকের সামনে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে থাকা সিভিল পোশাকের এক কারারক্ষী ২০ টাকার বিনিময়ে বন্দীর স্বজনদের সাক্ষাৎ স্লিপ দিতে দেখা যায়। এভাবে সর্বশেষ আসামির সাথে বন্দীর সাক্ষাৎ পর্ব চলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এর মধ্যে মাঝখানে দুপুরে আসামি গণনার কারণে ঘণ্টাখানেক বিরতি দেয়া হয়।
ছেলের সাথে দেখা করতে আসা বৃদ্ধা কুলসুম বেগম এবং তার স্বামী জসিম উদ্দিন কারাগারের গেটের সামনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার পোলার নামে তার বউ নারী নির্যাতন মামলা করছে। পোলা আমার ধানমন্ডিতে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চাকরি করে। ৭০০ টাকা রোজ বেতন পায়। ভালোই সংসার চলছিল। কিন্তু পোলারে বউ তার বাপ মায়ের সাথে থাকতে দিবো না। পরে জানতে পারলাম, পোলার বউ ভালো না। এরআগে আরো দুইটা বিয়ে হইছে। পোলাও আর তারে নিয়া সংসার করতে চায় না। এটা জানার পর মাসখানেক আগে পুলিশ দিয়্যা পোলারে ধইর্যা নিছে থানায়। পরে বউ বাদী হয়ে নারী নির্যাতন মামলা দিছে। জীবনে কোনদিন থানা পুলিশ জেলখানা দেখিনি।’ পোলার (ছেলে) কারণে এখন আমাগো কারাগারে আসতে হচ্ছে। কারাগারে আপনার ছেলে কেমন আছেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেল তো জেলই। সরকারি খাওন খ্যায়। এটা আর কত ভালো হইব্যো। তবে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে সে বলে ভেতরে থাকা খাওয়ার কষ্ট যেমন তেমন ঘুমেরও কষ্ট। তাড়াতাড়ি জামিন করাও।
কারাগারে আসামির সাথে দেখা করতে কি কোনো টাকা লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এক আদম ব্যবসায়ীর খালাতো ভাই জয়নাল বলেন, এই যে দেখছেন না, গেটের সামনে লোক বসা। সেখানে গেলেই স্লিপ কাটতে হবে। একজন বন্দীর সাথে দেখা করতে ২০ টাকা লাগে। শহরের কারাগারে আরো বেশি টাকা লাগে। মাইকে তারা ডেকে দেখা করিয়ে দেয়। সাক্ষাৎ শেষে এসে জয়নাল জানান, তার আসামি আদম ব্যবসা করে। ঢাকার সনি ওভারসিস নামের রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর কথা ছিল। এর জন্য টাকা নিছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু অনেক ঘোরানোর পরও বিদেশ পাঠাইতে পারেনি।
জামিনে বের হওয়া আসামি লোকমান এ প্রতিবেদককে কারা অভ্যন্তরের নানা অনিয়মের তথ্য দিয়ে বলেন, কারাগারে নতুন যে বন্দী যাচ্ছে উনি যদি কারা হাসপাতালে থাকতে চান, তাহলে এক দিন থাকুক আর এক মাস থাকুক তাকে সিট ভাড়া বাবদ প্রথমেই ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া রাইটার, কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খাওয়াসহ সব মিলিয়ে একজনের প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার ২৪ দিনে কারাগারে থাকা বাবদ খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। আমি মাসিক চুক্তিতে কারাগারে ছিলাম। নিজেরাই রান্না করে খেয়েছি। প্রতিদিন কারাগার থেকে বন্দীদের কী ধরনের খাবার দেয়া হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে একটি হালকা গুড় লাগানো রুটি, দুপুরে মোটা চালের (নি¤œমানের) ভাত আর লাবরা, আর রাতে ভাত সব্জি দেয়া হতো। মাছ-মাংস কি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নলা মাছ বাইরে এক কেজি দেড় শ’ টাকা হলেও ভেতরে কারা ক্যান্টিন থেকে আমরা ২ কেজি ১৩০০ টাকায় কিনে নিতাম। গরুর মাংস ১ হাজার টাকা, ২ কেজি বয়লার মুরগির মাংস ৯০০ টাকায়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হাসপাতালে আমরা রান্না করে আরামে থাকতাম। কিন্তু যারা বাইরের সেলে থাকে তাদের কষ্ট অনেক হতো দেখতাম। বন্দীর চাপ বেশি হওয়ায় অনেককেই এক কাতে ঘুমাতে দেখেছি। তাদের কাছ থেকেও সিট ভাড়া মাইরধর করে বন্দীর আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে রাইটাররা আদায় করত বলে শুনেছি। তবে কত টাকা নেয়া হতো তা বলতে পারব না। তিনি বলেন, সরকারিভাবে সপ্তাহে একদিন মাংস দেয়া হতো। যেটির সাইজ আঙুলের কোণার পরিমাণ হবে। তা-ও গরম পানি দিয়ে কোনো রকমে সেদ্ধ করে তার পর বন্দীদের দেয়া হতো। ভেতরে পানির কষ্ট। দিনে দু’বার ছাড়ে। গোসলের কষ্ট ছিল। কী মামলায় আপনি ধরা পড়ে কারাগারে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইন্তাজগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৭৮ শতাংশ জমি কিনেছিলাম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে। এই জমির বিরোধের জের ধরেই আমার নামে নাশকতার মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পুলিশ মামলার এজাহারে খালিশা স্কুল ঘরে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করেছে। বাস্তবে আমাকে শিবালয় থানা পুলিশ বাড়ি থেকে জমিসংক্রান্ত মামলার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়েছিল। কারা হাসপাতালে থাকার সময় ডাক্তার আসত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাগারে কোনো ডাক্তার নেই। যিনি আসতেন তিনি এসে মাঝে মধ্যে নরমাল ওষুধ যেমন নাপা ও গ্যাসের ট্যাবলেট দিয়ে যেতেন। তার জানা মতে, মানিকগঞ্জ কারাগারে বর্তমানে মাদক মামলার আসামি বেশি।
গতকাল মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার ও জেলারের সরকারি মোবাইল নম্বরে এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাদের দু’জনের ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়, যে কারণে তাদের বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল রাজশাহীর পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক দুমকিতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সভাপতির নির্দেশে ক্লাস চালু

সকল